হামলাকারীদের গ্রেফতারে আলটিমেটাম

ছাত্রদল নেতার রগ কাটার ঘটনায় বিএনপি নেতা বহিষ্কার

বরিশাল ব্যুরো প্রকাশিত: মার্চ ৯, ২০২৫, ০৮:৫৯ পিএম
ছাত্রদল নেতার রগ কাটার ঘটনায় বিএনপি নেতা বহিষ্কার

বরিশালের বাকেরগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মো. আসাদুল্লাহ নামে এক ছাত্রদল নেতাকে কুপিয়ে হাত-পায়ের রগ কেটে দেওয়ার ঘটনার জেরে বহিষ্কার করা হয়েছে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ককে।

রোববার (৯ মার্চ) বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ এবং দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি কার্যকলাপের জন্য বরিশাল দক্ষিণ জেলাধীন বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক সালাম মৃধা ও যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীন ফরাজীকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এদিকে ছাত্রদল নেতা আসাদুল্লাহকে কুপিয়ে হাত ও পায়ের রগ কর্তনের ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে স্থানীয় প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে রবিবার (৯ মার্চ) দুপুরে বাকেরগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের বাসস্ট্যান্ডে মানববন্ধনের আয়োজন করে ছাত্রদলের উপজেলা, পৌর ও কলেজ শাখার নেতৃবৃন্দরা।

মানববন্ধনে বক্তারা ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি তোলেন। এ সময় তারা প্রশাসনের কাছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেফতারের চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দেন।  

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বাকেরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক নেয়ামুল হক নাহিদ, পৌর শাখার আহ্বায়ক রুহুল আমিন, সরকারি কলেজ শাখার আহ্বায়ক আলাল হাওলাদারসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ও কলেজ ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দরা।
মানববন্ধন শেষে তারা সন্ত্রাস বিরোধী স্লোগান সহকারে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।

অভিযোগ রয়েছে, ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক সালাম মৃধার ছত্রছায়ায় তারই কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল ফরাজীর লোকজন এই ঘটনা ঘটিয়েছে। শনিবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার নিয়ামতি বাজারে এ ঘটনা ঘটে। আহত মো. আসাদুল্লাহ নিয়ামতি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোহেল ফরাজীর পরিবার ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। পরে ইউনিয়ন বিএনপির নেতা সালাম মৃধার হাত ধরে সোহেল ফরাজী বিএনপিতে প্রবেশ করেন। ধনাঢ্য সোহেল ফরাজী সৌদি প্রবাসী। তিনি ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সে বিএনপির পদধারী নেতা বনে যান। সোহেল ফরাজীর ইন্ধনে তার আপন বড় ভাই যুবলীগ নেতা শাহীন ফরাজী প্রকাশ্যে ছাত্রদল নেতা আসাদুল্লাহকে কুপিয়ে হাত-পায়ের রগ কেটে মারাত্মকভাবে আহত করে। বর্তমানে আসাদুল্লাহ ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন।

আসাদুল্লাহর বাবা আলমগীর খাঁ’র অভিযোগ, হামলায় শাহীন ফরাজীসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াদুদ ফরাজী, শামীম ফরাজী, রাজিব ফরাজী, রফিক, মামুন, রুবেল বিজন, ইমনসহ আরও ১৫ থেকে ২০ জন নেতৃত্ব দেয়।

তিনি জানান, ৫ আগস্টের আগে শাহীন ফরাজীরা আওয়ামী লীগ করত। কিন্তু এখন তারা নব্য বিএনপি। ইউনিয়ন বিএনপির নেতা হওয়ার আগে সোহেল ফরাজী উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব রাকিবকে দামি আইফোন উপহার দেয়, একসঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যায়। সেসব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি। একইভাবে সালাম মৃধাও তাদেরকে দলে আনেন নিজের পাল্লা ভারি করার জন্য। তারা সবাই মিলে আমার ছেলেকে হত্যার চেষ্টা করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ১০টার দিকে আসাদুল্লাহ বাজারে অবস্থান করছিলেন। এমন সময় নিয়ামতি ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক সালাম মৃধা এবং যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীন ফরাজীর নেতৃত্বে একদল যুবক এসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি কোপায়। আত্মরক্ষা করতে গেলে তাকে রাস্তার ওপর ফেলেও কোপানো হয়। এক পার্যায়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে হামলাকারীরা চলে যায়। এ পুরো ঘটনাটি বাজারে উপস্থিত অসংখ্য মানুষ প্রত্যক্ষ করলেও ভয়ে তাকে উদ্ধার করতে কেউ সামনে আসেনি।

আহত ছাত্রদল নেতার স্বজনরা জানান, সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি কোপে আসাদুল্লাহর হাত এবং পায়ের রগ কেটে গেছে।

বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ নিয়ে ছাত্রদল নেতাকে উদ্ধার করে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে পাঠাই। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাঁদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

আরএস