চৌগাছায় স্ত্রীকে খুন, স্বামী পালাতক

এম এ মান্নান, চৌগাছা (যশোর) প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২৫, ০৫:৩৬ পিএম
চৌগাছায় স্ত্রীকে খুন, স্বামী পালাতক

যশোরের চৌগাছায় স্বামীর লাঠির আঘাতে স্ত্রী রেকসোনা খাতুন (৩২) নিহত হয়েছেন। সোমবার (১০ মার্চ) সকালে উপজেলার রানায়নপুর গ্রামের পূর্ব পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। চৌগাছা থানা পুলিশ নিহত নারীর লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছেন। এ ঘটনার পরে ঘাতক স্বামী রাকিবুল ইসলাম সিজার পলাতক রয়েছে। সোমবার দুপুরে এ ঘটনায় নিহত রেকসনার মেয়ে মিম খাতুন বাদী হয়ে চৌগাছা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

রাকিবুল ইসলাম সিজার উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের মৃত আব্দার রহমানের ছেলে। তিনি পেশায় একজন রাজ মিস্ত্রী। ঘটনার পর থেকে রাকিবুল পালাতক রয়েছেন। রেকসনা উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের আন্দুলিয়া গ্রামের সানোয়ার হোসেনের মেয়ে। সানোয়ার হোসেন বর্তমানে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের ধান্যহাড়িয়া গ্রামে বসবাস করেন।

নিহত রেকসনার শাশুড়ি শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহানাজ বেগম জানান, রবিবার (৯ মার্চ) রাতে রেকসনার গ্রামের বাড়ি নারায়নপুর আসে। সে রাকিবের ২য় স্ত্রী। রাকিবের প্রথম স্ত্রীর সাথে ৩/৪ বছর আগে পারিবারিক দ্বন্দ্বে ছাড়াছাড়ি হয়। ১ম স্ত্রী বর্তমানে ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। তার একটি ছেলে রয়েছে। পরে রেকসোনা বেগমকে বিয়ে করে সে। রেকসোনার আগে স্বামীর ঘরে মিম নামে একটি মেয়ে রয়েছে। তার বিয়েও হয়েছে। রেকসোনাকে নিয়ে রাকিব চৌগাছা শহরের বাকপাড়ার কাজীপাড়া এলাকায় জুয়েল হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাসায় ভাড়া থাকত। রেকসনা গৃহপরিচারিকা এবং রাকিবুল রাজ মিস্ত্রীর কাজ করত। অভাবী সংসার তাই বিয়ের পর থেকেই পারিবারিক ঝামেলা শুরু হয়। রাকিব ৪/৫ দিন আগে রেকসোনার সাথে গোলযোগ করে গ্রামের বাড়ি নারায়ণপুর চলে আসে। 

রাকিবের আগের পক্ষের ছেলে রিফাদ হাসান (১১) কে খোঁজ-খবর নেওয়া ও এটা ওটা কিনে দেওয়ায় (বউমা) রেকসোনা প্রায় রাকিবের সাথে ঝগড়া হতো। ঘটনার দিন সকালে দুইজন কথাকাটাকাটি করছিল। আমি চলাফেরা করতে পারি না। পরে কোনো রকমে আমি ঘর থেকে নেমে গিয়ে দেখি রেকসোনা মাটিতে পড়ে আছে। পাশে একটি বাঁশের লাঠি। যাতে রক্ত লেগে ছিলো। প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলে তার মৃত্যু হয়। আমার ডাকচিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এলে রাকিব পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে চৌগাছার ভাড়া বাড়ির মালিক জুয়েল হোসেন ঘটনাস্থলে যান। এসময় তিনি রেকসোনার মোবাইলে কল দিলে রাকিবুলের রান্নাঘরের ভেতরে বেঁজে উঠে। পুলিশ রাকিবুলের রান্নাঘর থেকে দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেন।

স্থানীয়রা জানান, রেকসোনা বেগম রাকিবুলের থেকে বয়সে বেশ বড়। কবে তারা বিয়ে করেছেন তারা জানতেন না। মাঝে-মধ্যে তারা বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে আসতো। তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকতো।

রেকসনার বাবা সানোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনার কিছুই জানা ছিলো না। সংবাদ পেয়ে এসে দেখি আমার মেয়ে খুন হয়েছে। তার মৃতদেহ চৌগাছা থানায় রয়েছে।

চৌগাছা থানার উপ-পরিদর্শক ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান বলেন, ভোঁতা কিছু দিয়ে খুব জোরে আঘাত করা হয়েছে। ফলে নিহতের কপালের বাম পাশে গভীর ক্ষত হয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে প্রচুর রক্ত ক্ষরণের ফলেই ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়েছে।

এ ব্যাপারে চৌগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন জানান, সোমবার দুপুরে এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে মিম খাতুন বাদী হয়ে চৌগাছা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল  হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।  হত্যার সাথে জড়িতকে আটকের জন্য পুলিশের অভিযান চলছে।

আরএস