স্কুলের মালিকানা নিয়ে বিরোধ

মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলায় তিন শিক্ষক কারাগারে

আশিকুর রহমান হৃদয়, শরীয়তপুর প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৫, ০৭:০৮ পিএম
মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলায় তিন শিক্ষক কারাগারে

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার প্রতিভা সাইন্স প্রিপারেটরি স্কুলের মালিকানা নিয়ে বিরোধের জেরে তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে মামলা করা হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে প্রতিভা কোচিং সেন্টার নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে এর পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন আওয়ামী যুবলীগ নেতা নাঈমুল হাসান। ২০১৮ সালে শাহিনুল ইসলাম দেশে ফিরে এসে কোচিং সেন্টারটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ স্কুলে রূপান্তর করার উদ্যোগ নেন। এ সময় শাহিনুল ইসলাম, তার ভাই নাঈমুল হাসান, আরিফুল ইসলাম, শাহ আলম হাওলাদার, আনোয়ার হোসাইন ও মনোয়ার হোসাইন যৌথ মালিকানায় স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন।

২০২১ সালে আওয়ামী যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাঈমুল হাসান রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে শাহ আলম হাওলাদার, আনোয়ার হোসাইন ও মনোয়ার হোসাইনকে প্রতিষ্ঠান থেকে জোরপূর্বক বের করে দেন। এরপর দীর্ঘদিন তারা মালিকানা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৩ মার্চ তিনজন শিক্ষক তাদের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য স্কুলে গেলে প্রতিষ্ঠানটির সহকারী শিক্ষক স্বর্ণা আক্তার জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) ফোন করে জানায়, অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা স্কুল ভাঙচুর করছে। পুলিশ এসে তাদের আটক করে থানায় নেয়।

পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার পর নাঈমুল হাসানের নির্দেশে স্কুলের আয়া মাকসুদা বেগমকে সহকারী শিক্ষক পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজির মামলা করতে বলা হয়। মূল শিক্ষকরা রাজি না হওয়ায় মাকসুদা বেগম বাদী হয়ে শাহ আলম, আনোয়ার ও মনোয়ারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। ফলে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায়।

প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই মামলাকে মিথ্যা দাবি করে সঠিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া বলেন, "আমাদের স্যারদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। তারা কখনোই চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন না। নাঈমুল হাসান স্যার স্কুলের মালিকানা এককভাবে নেওয়ার জন্যই এই মামলা করেছেন। আমরা ন্যায়বিচার চাই।"

সহকারী শিক্ষক স্বর্ণা আক্তার জানান, "ঘটনার দিন আমরা ক্লাসে ছিলাম, হঠাৎ দেখি তিনজন শিক্ষক স্কুলে এসেছেন। পরে নাঈমুল হাসান স্যার ৯৯৯-এ কল করতে বলেন। পরে তিনি আমাদের চাঁদাবাজির মামলা করতে বলেন। আমরা রাজি না হলে স্কুলের আয়া মাকসুদা বেগমকে দিয়ে মামলা করানো হয়।"

আটক মনোয়ার মাষ্টারের স্ত্রী শারমিন রুবি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, "আমার স্বামীসহ তিনজন শিক্ষক স্কুলের মালিক। অথচ তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। এখন ছোট বাচ্চাকে নিয়ে কোথায় যাব?"

ভেদরগঞ্জ থানার ওসি মো. পারভেজ হাসান সেলিম বলেন, "বিষয়টি তদন্তাধীন। যদি অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

সম্প্রতি, নাঈমুল হাসানকে "অপারেশন ডেভিল হান্ট" অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আগের আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় সচেতন মহল এবং শিক্ষার্থীরা এই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত এবং মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষকদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।

ইএইচ