ইরি-বোরো মৌসুমে ধান চাষে ব্যয় বৃদ্ধি, উদ্বেগে কৃষক

সাদুল্লাপুর (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২৫, ০৬:৪৯ পিএম
ইরি-বোরো মৌসুমে ধান চাষে ব্যয় বৃদ্ধি, উদ্বেগে কৃষক

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায় ইরি-বোরো মৌসুমে ধান চাষের ব্যয় বেড়েছে। বিশাল মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ থাকলেও কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ।

সেচ, সার, কীটনাশক, বিদ্যুৎ, ডিজেল ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে প্রতি বিঘায় (৩৩ শতাংশ) ৫-৬ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, সেচ পাম্পের মালিকরা নিয়মিত পানি না দেওয়ায় জমিতে রোগ-বালাই ও পোকামাকড়ের প্রকোপ বেড়েছে। কীটনাশক বেশি প্রয়োগ করেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে নকল কীটনাশকের প্রচলন থাকায় ফসল নষ্ট হচ্ছে, এতে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ও চাষাবাদের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর গাইবান্ধায় ১ লক্ষ ২৯ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সাদুল্লাপুর উপজেলায় এই লক্ষ্যমাত্রা ১৫ হাজার ৬৩০ হেক্টর, যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি।

কৃষকের অভিজ্ঞতা ও প্রতিক্রিয়া

সাদুল্লাপুর উপজেলার খোর্দ্দকোমরপুর ইউনিয়নের কৃষক মশিউর রহমান বলেন, “গত বছর এক বিঘা জমিতে ধান চাষে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল, এবার তা বেড়ে ১৮-১৯ হাজার টাকা হতে পারে। সেচ বাবদ খরচ ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা, যা এখন ১ হাজার ৭০০ টাকা হয়েছে।”

ইদিলপুর ইউনিয়নের আনছার আলী জানান, “আমাদের এলাকার কৃষকরা ধানের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু উৎপাদন খরচ বাড়লেও ধানের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। সিন্ডিকেট ভেঙে কৃষকদের স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে।”

কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, “এক বিঘা জমিতে হাইব্রিড মোটা ধান ২৫-২৬ মণ হলে বাজার দরে ১৭-২০ হাজার টাকার মতো আসতে পারে। কিন্তু খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভ না হয়ে উল্টো লোকসান হতে পারে।”

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মাহবুবুল আলম বসুনিয়া বলেন, “এ বছর বিভিন্ন বিলে পানি কম থাকলেও আবহাওয়া ভালো থাকলে ভালো ফলন হবে। কৃষকদের অনুমোদিত কীটনাশক কেনার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, পাশাপাশি হটলাইনে ফোন করে পরামর্শ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।”

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম বলেন, “সঠিক পরিচর্যা হলে এ বছর ইরি-বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে ন্যায্য দাম নিশ্চিত না হলে কৃষকরা ভবিষ্যতে ধান চাষে আগ্রহ হারাতে পারেন। আমরা কৃষকদের সহায়তা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”

ফলন ও বাজারদর নিয়ে শঙ্কা

চাষাবাদের ব্যয় বাড়লেও ধানের বাজারদর নিয়ে কৃষকদের শঙ্কা রয়েছে। প্রতি বছর ফসল ওঠার পরপরই বাজারে সিন্ডিকেটের কারণে দাম কমে যায়। ফলে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য না পেয়ে লোকসানে পড়েন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমাতে প্রয়োজন সরকারি সহায়তা, ভর্তুকি ও বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। অন্যথায় কৃষকদের লোকসানের ধাক্কা পুরো খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ইএইচ