আশাশুনিতে ৪৬৭ হেক্টর লবণাক্ত জমিতে তরমুজ চাষ, ভালো ফলনের আশা

আশাশুনি (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি: প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৫, ০৩:৪৮ পিএম
আশাশুনিতে ৪৬৭ হেক্টর লবণাক্ত জমিতে তরমুজ চাষ, ভালো ফলনের আশা

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নে লবণাক্ত জমিতে বাড়ছে তরমুজ চাষ। অল্প সময়ে বেশি লাভ হওয়ায় পতিত জমিতেও প্রথমবারের মতো তরমুজ চাষে নেমেছেন অনেকে। জমি লবণাক্ত হলেও উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে এ বছর ৪৬৭ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৩৪০ হেক্টর বেশি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ইউনিয়নের ফকরাবাদ, বুড়িয়া, নড়েরাবাদ, গোয়ালডাঙ্গা ও বামনডাঙ্গা বিল এখন সবুজ লতায় সমারোহ।অধিকাংশ গাছে ফুল ফোটার পাশাপাশি ফলন আসতে শুরু করেছে। নারী শ্রমিকরা কেউ তরমুজ গাছের পরিচর্যা করছেন, কেউবা দূরের খালে কিংবা পুকুরে জমা পানি সেচযন্ত্রের সাহায্যে পাইপ দিয়ে আনা হচ্ছে খেতে সেই পাইপ উঁচু করে ধরে রাখছেন, আবার কেউ গাছের চারিপাশে পানি দিচ্ছেন।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৪ বছর আগেও বড়দল ইউনিয়নের বিলগুলোতে আমন ধান চাষের পর জমি অনাবাদি পড়ে থাকত। বিলগুলো গোচারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহার হতো এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে মাটিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যেত, তাই বৃথা পরিশ্রম হবে ভেবে কেউ চাষাবাদের চেষ্টাও করতেন না। এখন সেই জমিগুলোই স্বপ্ন দেখাচ্ছে তরমুজচাষিদের। অল্প সময়ে বিনিয়োগের দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ লাভ হওয়ায় দিন দিন তাঁদের ভরসা হয়ে উঠছে লবণসহিষ্ণু তরমুজ চাষ। তরমুজের বীজ রোপণ থেকে ফল উত্তোলন পর্যন্ত সময় লাগে সর্বোচ্চ আড়াই থেকে তিন মাস। প্রতি বিঘায় খরচ হয় ২০-২৫ হাজার টাকা। আর ভাগ্য ভালো হলে তরমুজ বিক্রি হয় ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায়।
বড়দলের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সত্যরঞ্জন বৈরাগী বলেন, গত বছর তরমুজে ব্যাপক লাভ হয়েছিল। কিছু কিছু কৃষক বিঘাপ্রতি ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার বেশি লাভ করেছিলেন। এ কারণে এবার অনেক বেশি কৃষক তরমুজের চাষে ঝুঁকছেন। তিনি নিজেও এ বছর ১০ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। তবে এ বছর চাষের খরচ, মজুরির দাম, সারের দাম, বীজের দাম সবই বেশি বলে জানান তিনি।
তরমুজ চাষি মাছুম সরদার বলেন, গত বছর ৬৫ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষে, বিঘাপ্রতি ৪৫ হাজার টাকার মতো লাভ হয়। এ বছর ৭০ বিঘা চাষ করেছি। বিঘাপ্রতি ২১ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এ পর্যন্ত। চারা ভালো হয়েছে। এ বছরও ভালো ফলন পাবো বলে আশা রাখি। কিন্তু তিতুখালী খালে লবণ পানি উঠায় পানি ও মাটির লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় ভয়ে থাকতে হয়।
শ্রমিকদেরও যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। চারায় পানি দিতে দিতে ঝর্ণা রানী নামের এক নারী বলেন, সারাদিন ৪০০ টাকা মজুরিতে কাজ করি। প্রতিবছর তরমুজ চাষ শুরু হলে এই এলাকার ৩ থেকে ৪শত নারীরা প্রায় ২ মাস কাজের সুযোগ পেয়ে থাকে।
বড়দল ইউনিয়নের দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজমুস সাকিব বলেন, ক্লাইমেট স্মার্ট  প্রকল্পের মাধ্যমে তরমুজ চাষের জন্য ৪০টি মিনি পুকুর খনন করা হয়েছে যেখানে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে সেচ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং একই প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় তরমুজ চাষের প্রযুক্তির উপর ৪ ব্যাচ প্রশিক্ষণ, সোলার পাম্প, ডিজেল চালিত সেচ মেশিন ও প্রদর্শনী প্রদান করেছি  এবং উঠান বৈঠকের মাধ্যমে কৃষকদেরকে তরমুজ চাষাবাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত মাঠের অবস্থা সন্তোষজনক এবং আবহাওয়া ভালো থাকলে আশা করছি এ বছর প্রচুর লাভ হবে এবং পরবর্তী বছরে আরো নতুন করে ৩ থেকে ৪শত হেক্টর এক ফসলি জমি তরমুজ চাষের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।

বিআরইউ