গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামে কৃষকের জমিতে সবুজ পাতার ফাঁকে লুকিয়ে রয়েছে উন্নত জাতের সবুজ গোলাপি রঙের বেগুন। একটি গাছে ৫-৬টি পরিপক্ক বেগুন ধরেছে, প্রতিটির ওজন ৭০০-৮০০ গ্রাম। এসব গাছে অসংখ্য ফুল ও কুঁড়ি রয়েছে, যা বাজারে চাহিদা থাকায় এবং ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় কৃষকরা লক্ষ লক্ষ টাকার বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন।
বাজারে অনেক জাতের বেগুন থাকলেও, এ বছর সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি অফিস মুষ্টিমেয় কিছু কৃষককে পরীক্ষামূলকভাবে বারী-৪ জাতের বেগুনের বীজ সরবরাহ করে। কৃষকরা সেই বীজ থেকে চারা উৎপাদন করে জমিতে রোপণ করার পর দু`মাসের মধ্যে গাছের শাখায় ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের বেগুন ধরতে শুরু করেছে। এই বেগুনটি সুস্বাদু, বীজহীন এবং কীটনাশক মুক্ত, ফলে বাজারে এর চাহিদা বেড়েছে। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় উন্নত জাতের বেগুন চাষ করে কৃষকরা লাখপতি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। তাদের মুখে এক ঝিলিক হাসি তাদের আত্মতৃপ্তির কথা বলছে।
উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের কৃষক সোলায়মান মিয়া বলেন, "এ বছরই প্রথম আমি ৫০ শতাংশ জমিতে বারী-৪ জাতের দু`রকম বেগুনের চাষ করেছি। উৎপাদন ভালো হওয়ায় প্রথম পর্যায়ে এক সপ্তাহে ৭২ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। এই বেগুনে শ্রম ছাড়া আমার আর কোনো ব্যয় নেই।" তিনি আরও বলেন, "মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই পোকামুক্ত বেগুনে এ পর্যন্ত আমি কামলা বাবদ দশ হাজার টাকা খরচ করেছি মাত্র। কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী, সার এবং কীটনাশক প্রয়োগ করে ভালো ফল পাচ্ছি।"
এছাড়া একই গ্রামের কৃষক শাহানুর প্রামাণিক জানান, তিনি ১৮ শতাংশ জমিতে বারী-৪ জাতের বেগুনের চাষ করেছেন। "অন্য বেগুনের তুলনায় এই জাতের বেগুনে কম সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়, তবে সেচ কিছুটা বেশি দিতে হয়। আমি একবার কীটনাশক এবং বালাইনাশক প্রয়োগ করেছি এবং পাখির উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে জাল দিয়েছি," বলেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি উপসহকারী নজরুল ইসলাম বলেন, "এ বছর কয়েকজন কৃষকের মাঝে বারী-৪ জাতের বেগুনের বীজ সরবরাহ করেছি, এতে ভালো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। আশা করি আগামীতে চাষ বাড়বে।"
সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মতিউল আলম বলেন, "আমরা কৃষিতে আধুনিকতার ছোঁয়া এনে যুগোপযোগী ফসল উৎপাদনে কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করতে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন ফসলের বীজ, সার এবং কীটনাশক সরবরাহ করে আসছি। এরই ধারাবাহিকতায় উন্নত জাতের বেগুনের বীজ প্রদান করে আমরা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। বাজারে বিষমুক্ত বেগুনের পাশাপাশি অন্যান্য বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে প্রচুর সাড়া পাচ্ছি, যা কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে এবং কৃষকদের লাভবান করবে।"
ইএইচ