পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের নানা উদ্যোগ সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদুল আহমেদ-এর মানবিক কার্যক্রম সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট লাঘবে সুলভ মূল্যের বাজার, ভিজিএফ চাল বিতরণ, নিরাপদ ট্রাফিক ব্যবস্থা, মসজিদ সংশ্লিষ্টদের সহায়তা, এতিমদের জন্য বিশেষ খাবারের আয়োজনসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তিনি।
ভিজিএফ-এর চাল বিতরণে স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা:
ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে হতদরিদ্র ও অসহায় পরিবারের মাঝে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় বিনামূল্যে চাল বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ইউনিয়ন পর্যায়ে তালিকাভুক্ত উপকারভোগীদের হাতে সুষ্ঠু ও শৃঙ্খলভাবে চাল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বিতরণ কার্যক্রমে দুর্নীতি রোধে কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে, যাতে প্রকৃত সুবিধাভোগীরা তাদের প্রাপ্য সহায়তা পায়।
এ বিষয়ে ইউএনও মো. এরশাদুল আহমেদ বলেন, “ভিজিএফ চাল বিতরণে আমরা স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করেছি। কোনো অনিয়ম হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সুলভ মূল্যের বাজার ও বিশেষ মাংস বিক্রি:
রমজান মাসজুড়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য উপজেলা প্রশাসনের "সুলভ মূল্যের বাজার" স্বস্তি এনে দিয়েছে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে, যাতে সাধারণ মানুষ সহজেই খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করতে পারে।
এছাড়া, ঈদের আগে ২৮ রমজান এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন ইউএনও। ওইদিন ১২টি গরু জবাই করে সুলভ মূল্যে মাংস (ভর্তুকি) বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে নিম্নআয়ের মানুষও ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে।
নিরাপদ ট্রাফিক ব্যবস্থা ও ঈদগাহ সংস্কার:
ঈদযাত্রায় নির্বিঘ্ন যান চলাচল নিশ্চিত করতে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ব্যস্ততম সড়কগুলোতে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েনসহ বাজার এলাকার যানজট নিরসনে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, ঈদের প্রধান জামাত নির্বিঘ্ন করতে উপজেলায় বিভিন্ন ঈদগাহ মাঠ সংস্কার করা হয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, যাতে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করতে পারেন।
অসহায় ও দরিদ্রদের মাঝে ইফতার বিতরণ:
রমজানের প্রথম দিন থেকেই উপজেলার অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ইউএনও মো. এরশাদুল আহমেদ-এর উদ্যোগে ব্যক্তিগত ও সরকারি সহায়তায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের মাঝে ইফতার বিতরণ করা হচ্ছে, যা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।
এতিমদের জন্য বিশেষ খাবার ও আলেমদের সহায়তা:
ঈদের আনন্দ সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে উপজেলার বিভিন্ন এতিমখানার শিশুদের জন্য বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। ঈদের দিন তারা যেন উৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়, সে জন্য নিজ উদ্যোগে এ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন ইউএনও।
মসজিদের ইমাম,মুয়াজ্জিন, খতিব,মাদরাসার মুহতামিম, আলেমাদেরকে যারা গরীব,অসহায়,লোক-লজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারেনা এমন প্রায় ৪৫০ জনকে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে, যা তাদের জীবনযাত্রায় কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে।
গ্রামীণ উন্নয়ন ও প্রশাসনিক কার্যক্রম তদারকি:
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইউএনও’র দিকনির্দেশনায় এ উন্নয়ন কার্যক্রম স্থানীয়দের চলাচল সহজ ও নিরাপদ করে তুলবে।
প্রশাসনিক কার্যক্রমের গতিশীলতা বাড়াতে প্রতি সপ্তাহে গণশুনানির মাধ্যমে জমিজমা সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, গ্রাম আদালতের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে বিনা নোটিশে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ পরিদর্শন করা হচ্ছে।
সমস্যা সমাধানে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার ও মোবাইল টিম:
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যার খবর পেয়েই দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছেন ইউএনও। উপজেলা প্রকৌশলী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিকভাবে নির্দেশনা দিয়ে সমস্যার সমাধান নিশ্চিত করা হচ্ছে।
এছাড়া, ঈদ উপলক্ষে যানজট নিরসনে প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ইসলামী সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ছাত্রদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। মোবাইল টিম গঠন করে যেকোনো সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
জনগণের আশার আলো ইউএনও:
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, "এমন ইউএনও যদি সব জায়গায় থাকত, তাহলে গরিব মানুষের কষ্ট অনেক কমে যেত। উনি সত্যিই অসাধারণ কাজ করছেন।"
ইউএনও মো. এরশাদুল আহমেদ শুধু প্রশাসনিক কর্মকর্তা নন, বরং একজন মানবিক অভিভাবক। তার উদ্যোগে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে নতুন গতি এসেছে, যা ঈদের আনন্দ আরও বেশি ছড়িয়ে দেবে—এটাই সবার প্রত্যাশা।
বিআরইউ