আ.লীগ নেতা ‘বোমা কুদ্দুস’ জামিনের পর আবারও উত্তাল জাজিরা, সংঘর্ষে আহত ১৬

শরীয়তপুর প্রতিনিধি: প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২৫, ১২:১০ পিএম
আ.লীগ নেতা ‘বোমা কুদ্দুস’ জামিনের পর আবারও উত্তাল জাজিরা, সংঘর্ষে আহত ১৬

শরীয়তপুরের জাজিরায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই শতাধিক হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মারুফ মাল নামে এক যুবকের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন সহ ১৬ জন গুরুতর আহত হয়।

গতকাল শনিবার (৫ এপ্রিল) সকালে উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নের দূর্বাডাঙ্গা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬-২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা কুদ্দুস বেপারী ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জলিল মাদবরের সমর্থকদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ চলছে। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শনিবার সকালে দূর্বাডাঙ্গা এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে পুনরায় সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।

এসময় দুইশতাধিক হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে ঢাকা থেকে কুদ্দুস ও জলিলকে গ্রেপ্তার করে। কয়েক মাস জেল খাটার পর কিছুদিন আগে কুদ্দুস জামিনে বের হন। জলিল এখনো জেলহাজতে রয়েছেন। কুদ্দুস জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আবারও এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। শনিবার সকালে কুদ্দুস বেপারীর সমর্থকরা জলিল মাদবরের সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ককটেল নিক্ষেপ করে। পাল্টা প্রতিরোধে জলিল মাদবরের সমর্থকরাও সংঘর্ষে জড়ায়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ ধারণ করে এবং উভয়পক্ষের মধ্যে দুইশতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে।

এদিকে, দু’পক্ষের সংঘর্ষ ও হাতবোমা বিস্ফোরণের ১৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দেখা যায়, একটি খোলা মাঠে উভয়পক্ষের লোক মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। সেখানে অনেকের হাতে বালতি ও হেলমেট পরিহিত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। বালতি থেকে হাতবোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। পরে সেগুলো বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে ধোঁয়ার সৃষ্টি করছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, একাধিক হত্যা মামলাসহ অসংখ্য মামলার আসামি কুদ্দুস বেপারী কীভাবে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং বারবার এলাকায় অশান্তির সৃষ্টি করছেন? প্রশাসনের কাছে জবাবদিহি ও স্থায়ী শান্তির দাবি উঠেছে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে।

এদিকে বোমা কুদ্দুসের অনুসারীদের বোমার আঘাতে হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হওয়া মারুফের বাবা আবু কালাম বলেন, আমার ছেলে মারুফ ঢাকায় নবাবগঞ্জে একটি চুড়ির কারখানায় কাজ করে। সে ঈদের ছুটিতে বেড়াতে এসেছে। আজ তার ঢাকা চলে যাওয়ার কথা ছিল। আমি বোমের শব্দ পেয়ে ঘর থেকে বের হয়ে শুনি আমার ছেলের হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পরে আমি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখি ওরে ঢাকা নিয়ে গেছে। আমি দেশবাসীর কাছে বোমা কুদ্দুসের বিচার চাই।

বোমা কুদ্দুসের অনুসারী ও হাতবোমার তৈরি করেন স্থানীয় (ছদ্মনাম) রমিজ উদ্দিন বলেন, আমাদের বিলাসপুর এলাকায় প্রায়ই বোমা কুদ্দুস ও পাউডার জলিলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তাদের দু’গ্রুপের মধ্যে বোমা বানানোর প্রশিক্ষিত টিম রয়েছে। আমাদের বোমা তৈরির কাঁচা মাল কুদ্দুস চেয়ারম্যান কিনে দেয়। তাছাড়া আমাদের মামলা,হামলা হলে টাকা পয়সা তিনিই দেয়। এ-সব কাজে আপনাদের ভয় লাগে না এমন প্রশ্নে বলেন, এ ধরণের কার্যক্রম দুর্গম চরে গিয়ে গোপনীয়তার সঙ্গে করতে হয়। কি করবো ভাই বানাতে না চাইলে আমাদের ভয় দেখায় পাশাপাশি মামলা ও মেরে ফেলার ভয় তো আছেই। আমরাও চাই আমাদের এলাকা থেকে এই ধরনের মারামারি হানাহানি বন্ধ হউক।

এ বিষয়ে জানতে কুদ্দুস বেপারীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তাদের ব্যবহৃত নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। অন্যদিকে ল জলিল মাদবর জেলে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নি।

এ বিষয়ে নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশিক মাহামুদ বলেন, “জলিল বেপারী ও কুদ্দুস বেপারীর মধ্যে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হওয়াকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা চলছিল, যার জেরে তাদের সমর্থকরা এলাকায় অস্থিরতা সৃষ্টি করে। ঈদের সময় মানুষের সমাগম বেশি থাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ককটেল বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।”

বিআরইউ