কুষ্টিয়ায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলন

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২৫, ০৩:২০ পিএম
কুষ্টিয়ায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলন
  • চাহিদার তুলনায় ১ লাখ ৭৩ হাজার টন উদ্বৃত্ত

কুষ্টিয়া জেলায় চলতি অর্থবছরে পেঁয়াজ চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকা ও কৃষি বিভাগের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

চলতি মৌসুমে ১৩ হাজার ২৪২ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বাস্তবে আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৯৭৯ হেক্টর জমিতে। তবে বেসরকারি হিসেবে পেঁয়াজ চাষের পরিমাণ আরও বেশি বলে জানা গেছে। বর্তমানে কৃষকরা মাঠ থেকে পেঁয়াজ উত্তোলন ও তা পরিস্কার করে ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কুষ্টিয়ায় পেঁয়াজের চাহিদা ৫০ হাজার মেট্রিক টন। অথচ উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ২ লাখ ২৩ হাজার মেট্রিক টন, ফলে চাহিদার তুলনায় ১ লাখ ৭৩ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উদ্বৃত্ত থাকবে।

চাষিরা জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এবার পেঁয়াজের বীজ ও চারার দাম কম থাকায় চাষে আগ্রহ বেড়েছে। তবে শ্রমিকের মজুরি, সেচ খরচ ও মাটি প্রস্তুতের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তারা কিছুটা হতাশ। গত বছর যেখানে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা কেজিতে, সেখানে এবার তা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে। এতে করে অধিকাংশ কৃষক লাভের চেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া জানায়, এ বছর কৃষকেরা ‘তাহেরপুরী’, ‘বারী পেঁয়াজ-১’, ‘কিংসুপার’ ও ‘মেটাল’ জাতের পেঁয়াজ চাষ করেছেন।
উপজেলা ভিত্তিক পেঁয়াজ আবাদ হচ্ছে—

  •   কুষ্টিয়া সদর: ২,২৩০ হেক্টর

  •   খোকসা: ২,৭৯৫ হেক্টর

  •    কুমারখালী: ৪,৯২০ হেক্টর

  •    মিরপুর: ৫২৮ হেক্টর

  •    ভেড়ামারা: ২৩৫ হেক্টর

  •    দৌলতপুর: ৩,২৭১ হেক্টর

মাঠ পর্যায়ে কৃষকেরা জানান, বাস্তবে আবাদকৃত জমির পরিমাণ সরকারি তথ্যের চেয়েও বেশি।

চাষিরা আরও জানান, গেল বছর যে পেঁয়াজের বীজ ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, তা এবার ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায় পাওয়া গেছে। চারার দামও কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। উৎপাদন ব্যয় বিঘা প্রতি প্রায় ২৮ থেকে ৩২ হাজার টাকা। ভালো ফলনে বিঘা প্রতি ৪৫ থেকে ৬০ মণ পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৪০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।

কুষ্টিয়া শহরতলির বাড়াদী গ্রামের চাষি নরেশ আলী বলেন, “তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। ফলন ভালো হলেও বাজারমূল্য কম হওয়ায় লাভ হচ্ছে না।”

চাপড়া ইউনিয়নের চাষি মিজানুর বলেন, “বীজ ও চারার দাম কম ছিল। দেড় বিঘা জমিতে চাষ করেছি, পরিচর্যাও ভালো করেছি। আশা করছি ফলন ভালো হবে।”

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, কুষ্টিয়ার মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

ইএইচ