বারুণী স্নান ও ধর্মীয় মাতুয়া মেলায় ভক্ত-দর্শনার্থীদের ভিড়

বাগেরহাট প্রতিনিধি প্রকাশিত: এপ্রিল ১০, ২০২৫, ০৫:৫৬ পিএম
বারুণী স্নান ও ধর্মীয় মাতুয়া মেলায় ভক্ত-দর্শনার্থীদের ভিড়

মাতুয়া সম্প্রদায়ের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের লক্ষ্মীখালী এলাকা। ভক্ত ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত বারুণী স্নান ও ধর্মীয় মাতুয়া মেলা। বিশাল পুকুরে পূণ্য স্নানের মাধ্যমে পাপ মোচনের আশা করছেন ভক্তরা।

বারুণী স্নান ও ধর্মীয় মাতুয়া মেলা উপলক্ষে বুধবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভক্ত ও দর্শনার্থীরা লক্ষ্মীখালী হরিচাঁদ গোপাল ঠাকুরের আশ্রমে আসতে শুরু করেন। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী রাত ১২টায় আশ্রমের সামনে থাকা পুকুরে গোসল শুরু হয়, এবং বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাত ১টা ৩৯ মিনিট পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে গোসল করবেন ভক্ত দর্শনার্থীরা। এই সময়ে বিশাল পুকুরে কয়েক হাজার নারী পুরুষ গোসল করে পাপ মোচনের চেষ্টা করবেন।

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে আশ্রম এলাকায় ভক্ত-দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। আশ্রমে প্রবেশের দুই পাশের দুই সড়ক থেকে ঢাকঢোল বাজিয়ে, মাতুয়া সম্প্রদায়ের নির্দিষ্ট পতাকা উড়িয়ে দলে দলে ভক্তরা আসছেন এখানে। পূণ্য স্নানের পাশাপাশি কীর্তন গান, ধর্মীয় আলোচনাসহ প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করেন ভক্ত মাতুয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা। মাতুয়া সম্প্রদায়ের মূল দর্শন মানুষের সেবার অংশ হিসেবে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের খাবার আয়োজন করেন আশ্রম কর্তৃপক্ষ। এছাড়া, ‍‍`বারণ ইচ্ছা‍‍` নামে একে অপরের সাথে কোলাকুলি ও কুশল বিনিময় করতে দেখা যায়।

এখানে পূণ্য স্নানের মাধ্যমে তাদের পাপ মোচন হবে, সেই সাথে মানব সেবার মাধ্যমে ঈশ্বরের কৃপা লাভ করা যাবে, জানান ভক্তরা।

গোপালগঞ্জ থেকে আসা সাথী দেবনাথ নামের এক নারী বলেন, “কয়েক বছর ধরে এখানে আসি। এখানে আসলে আমরা মানসিক প্রশান্তি অনুভব করি। সবার সাথে দেখা হয়। এছাড়া, আমরা বিশ্বাস করি, এই পুকুরে যে পূণ্য স্নান করলে আমাদের পাপ মোচন হয়ে যায়।”

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বড়মাছুয়া এলাকা থেকে আসা অবনি বসু রায় বলেন, “আমরা হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুসারী। তাই এখানে এসেছি, সবার সাথে দেখা হয়েছে। মৃত্যু পর্যন্ত এই ঠাকুরের আদর্শ মেনে চলতে চাই।”

এবারের বারুণী স্নানে বাংলাদেশী মতুয়া সম্প্রদায় ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও ভুটান থেকে এসেছেন। এবারের ভক্তের সংখ্যা গেল কয়েক বছরের থেকে অনেক বেশি, দাবি করেছেন মাতুয়া সম্প্রদায়ের নেতারা।

বাংলাদেশ মাতুয়া মহাসংঘের সহ-সভাপতি রতন কুমার মিত্র বলেন, “গেল কয়েক বছরের থেকে এবার ভক্ত ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি অনেক বেশি। ভারত ও ভুটান থেকেও কয়েকটি দল এসেছে। খুবই শান্তিপূর্ণভাবে আমরা এই উৎসব ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে পারব, আশা করি।”

এই বিশাল আয়োজনের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বাসিন্দারা কাজ করেছেন। মেলায় শুধু সনাতন ধর্মালম্বীরা নয়, মুসলমানরাও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। হিন্দু-মুসলিমদের এই মেলবন্ধন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে, জানান আশ্রমের গদিনীশিন ঠাকুর সাগর সাধু ঠাকুর। তিনি বলেন, “এই ধামে ১০৩ বছর ধরে বারুণী স্নান ও ধর্মীয় মাতুয়া মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই মেলায় সবসময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আমাদের সহযোগিতা করেন। এবারও তাই করেছেন। স্থানীয় যে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছে, তারাও আমাদের সহযোগিতা করেছেন। দূরদূরান্ত থেকে মাতুয়াদের পাশাপাশি মুসলমানরাও এখানে আসেন এবং মেলা উপভোগ করেন। সব মিলিয়ে এই মেলাটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ভবিষ্যতেও এ ধরনের আয়োজন ও সম্প্রতি অব্যাহত থাকবে।”

ন্যব্রক্ষ্ম হরিচাঁদ ঠাকুরের শুভ আবির্ভাব উপলক্ষে বুধবার শুরু হওয়া এই বারুণী স্নান আনুষ্ঠানিকভাবে শুক্রবার শেষ হবে। তবে মেলা চলবে সপ্তাহব্যাপী। মেলা বিভিন্ন পণ্যের পশরা সাজিয়ে বসেছেন ছোট-বড় তিন শতাধিক ব্যবসায়ী।

ইএইচ