শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বারুহাস মেলা জৌলুস হারিয়েছে

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: এপ্রিল ১২, ২০২৫, ০২:৫৭ পিএম
শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বারুহাস মেলা জৌলুস হারিয়েছে

মেলা হলো গ্রামীণ সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ, যার সূচনা বহু বছর আগেই। তেমনি একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বারুহাস মেলা, যার ইতিহাস প্রায় দেড় শত বছরের পুরোনো।

জমিদার আমলে গড়ে ওঠা এই মেলা একসময় চলনবিল অঞ্চলের মানুষের সবচেয়ে বড় উৎসব হিসেবে বিবেচিত হতো।

মেলার আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর চৈত্র মাসের চন্দ্রপঞ্জিকার ১৩ তারিখে তাড়াশ সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত বারুহাস বাজারে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর মেলাটি শুরু হয় শনিবার (১২ এপ্রিল)। যদিও আগের দিন বিকেল থেকেই মেলার কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। মূল মেলার পরদিন রোববার ‘বউ মেলা’ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আশপাশের গ্রামের গৃহবধূরা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করেন।

মেলাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত রয়েছে ‘ঝি জামাই’ বাড়িতে আনতেই হবে—এমন এক রেওয়াজ। স্থানীয়দের মতে, বারুহাস মেলা শুধু কেনাকাটার নয়, এটি একটি সম্প্রতির মিলনমেলাও।

৭০ থেকে ৯০-এর দশকে বারুহাস মেলার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা উত্তরবঙ্গে। বগুড়া, শেরপুর, নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ মহিষ ও গরুর গাড়ি নিয়ে দলবেঁধে মেলায় অংশ নিতেন। তখন মেলার এক পাশে তাবু টাঙিয়ে বসত সাময়িক বাজার।

এক মাস আগে থেকেই মেলা উপলক্ষে বাড়িতে প্রস্তুতি শুরু হতো—ঘরবাড়ি লেপা, মুড়ি ভাজা, অতিথি আপ্যায়নের আয়োজন ইত্যাদি। জামাইদের উপঢৌকন দেওয়া, বড় মাছ-মাংস ও মিষ্টির আয়োজন ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার।

কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে মেলার জৌলুস ক্রমেই কমে আসছে। এক সময় যে মেলা ২৫-৩০ গ্রামের মানুষের প্রাণের উৎসব ছিল, এখন তা শুধুমাত্র বারুহাস গ্রামকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে।

মেলার জৌলুস হারানোর কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্ধারিত স্থান সংকট, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, মানুষের রুচির পরিবর্তন এবং আধুনিক বাজার ব্যবস্থার সহজলভ্যতা। এখন চারপাশে গড়ে উঠেছে বড় বড় শপিংমল, যেখানে দেশ-বিদেশের পণ্য পাওয়া যায় সহজেই।

এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে গ্রামীণ জীবনের এই লোকজ ঐতিহ্য—যা আমাদের দেশের সংস্কৃতির অংশ—চিরতরে হারিয়ে যাবে। যেমন হারিয়ে যেতে বসেছে দেড় শত বছরের প্রাচীন বারুহাস মেলার গৌরব। তাই গ্রামীণ মেলাগুলোর টিকে থাকা এখন সময়ের দাবি।

ইএইচ