চৈত্রের শেষভাগে পাহাড়ের অন্যতম প্রধান সামাজিক উৎসব ‘বৈসাবী’র আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে খাগড়াছড়িতে।
শনিবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে চেঙ্গী ও মাইনী নদীতে ফুল ভাসিয়ে দেবী গঙ্গার পুজার মাধ্যমে চাকমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী বিজু উৎসবের সূচনা হয়।
সকাল থেকেই বিভিন্ন বয়সী চাকমা নারী-পুরুষ ঐতিহ্যবাহী পোশাকে বন থেকে সংগ্রহ করা নানা ধরনের ফুল—যেমন বিজু ফুল, মাধবীলতা প্রভৃতি—নদীতে ভাসিয়ে পুজা করেন।
পুরাতন বছরের গ্লানি ভুলে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো এবং সুখ-সমৃদ্ধির কামনায় দেবী গঙ্গার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করেন তারা। ফুল, নিমপাতা ও মোমবাতি দিয়ে সাজানো হয় পূজার সামগ্রী।
এ সময় চেঙ্গী ও মাইনী নদীর তীর পরিণত হয় মানুষের মিলনমেলায়। কোথাও এককভাবে, কোথাও দলবদ্ধভাবে ফুল উৎসর্গ করতে দেখা যায় অংশগ্রহণকারীদের। নদীর জলাধার ফুলে ফুলে হয়ে ওঠে রঙিন। এতে পাহাড়ে সৃষ্টি হয় আনন্দঘন পরিবেশ।
ফুল বিজুতে অংশ নেওয়া বর্ণিতা চাকমা বলেন, “আমরা গঙ্গা মায়ের উদ্দেশ্যে ফুল দিয়ে পুজা করেছি। রাতেই ফুল সংগ্রহ করেছি। আজ আমাদের মূল বিজু।”
প্রীতি চাকমা বলেন, “প্রতি বছর আমরা এই উৎসব পালন করি। এবারও মা গঙ্গার উদ্দেশ্যে পুজা করেছি। পরিবারের মঙ্গল কামনা করেছি।”
শুভা রানী চাকমা বলেন, “বিভিন্ন ধরনের ফুল দিয়ে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে পুজা করেছি। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে এসে খুব ভালো লাগছে।”

ডেসটিনি চাকমা জানান, “রাতেই ফুল সংগ্রহ করেছি। আজ ভোরে এসে নদীতে ফুল দিয়ে পুজা করেছি।”
ফুল ভাসানোর আগে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা আয়োজন করে বৈসু-সাংগ্রাই-বিজু উদযাপন কমিটি। হর্টিকালচার সংলগ্ন এলাকা থেকে শুরু হয়ে শোভাযাত্রাটি মাইনী নদীতে গিয়ে শেষ হয়। এতে শত শত মানুষ অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন দীঘিনালা জোনের সেনা অধিনায়ক লে. কর্নেল ওমর ফারুক, উপ-অধিনায়ক মেজর মেহেদি হাসান এবং উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ।
জেলার অন্যান্য এলাকাতেও—যেমন ফেনী নদীসহ বিভিন্ন জলাধারে—চাকমা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা একইভাবে দেবী গঙ্গার উদ্দেশ্যে ফুল ভাসিয়ে পুজা করেন।

বৈসু-সাংগ্রাই-বিজু উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা সমির চাকমা বলেন, “নদীতে ফুল ভাসানোর মাধ্যমে ফুল বিজুর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। আমরা আজকের দিনে দেশের মঙ্গল ও সুখ-সমৃদ্ধির কামনা করি। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই যেন পুরাতন বছরের গ্লানি ভুলে নতুন বছরকে আনন্দ ও সম্প্রীতির সঙ্গে বরণ করতে পারে—সেই কামনাই করি।”
আগামীকাল উদযাপিত হবে মূল বিজু এবং পরদিন ‘গজ্জ্যাপজ্জ্যা’র মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করা হবে।
ইএইচ