ইতিহাসের সাক্ষী, সম্প্রীতির প্রতীক: নবাবগঞ্জের হাসনাবাদ গীর্জা

সাদের হোসেন বুলু, নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২৫, ০৫:৫৯ পিএম
ইতিহাসের সাক্ষী, সম্প্রীতির প্রতীক: নবাবগঞ্জের হাসনাবাদ গীর্জা

“ধর্মীয় ঐক্যের মেলবন্ধন” এবং সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বান্দুরা ইউনিয়ন। মুসলমান, হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা যুগ যুগ ধরে এখানে মিলেমিশে বসবাস করে আসছেন।

এখানে যেমন রয়েছে মোগল আমলের ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ, যা স্থানীয়ভাবে “ভাঙ্গা মসজিদ” নামে পরিচিত, তেমনি রয়েছে ইতিহাসের সাক্ষী এবং সম্প্রীতির প্রতীক পর্তুগিজ ফাদার রাফায়েলের অনন্য সৃষ্টি ‘হাসনাবাদ গীর্জা’ বা ‘রানীর পবিত্র জপমালা গীর্জা’।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, প্রায় তিনশ বছরেরও বেশি সময় ধরে নবাবগঞ্জের বান্দুরা ইউনিয়নের হাসনাবাদ এলাকায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বসবাস। এটি দেশের অন্যতম খ্রিস্টান অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবেও পরিচিত।

জানা গেছে, ১৭ শতক থেকেই এই অঞ্চলে পর্তুগিজ ধর্মযাজকরা খ্রিস্ট ধর্ম প্রচার শুরু করেন। ১৭৭৭ সালে ফাদার রাফায়েল গমেজ নামে এক ধর্মযাজক এখানে প্রথম গীর্জা প্রতিষ্ঠা করেন, যার নামকরণ করা হয় ‘রানীর পবিত্র জপমালা গীর্জা’। তখন এটি ছিল কাঠের তৈরি একটি গীর্জা। পরে ১৮৮৮ সালে পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। এটি অবিভক্ত বাংলার পঞ্চম গীর্জা হিসেবেও পরিচিত।

স্থানীয়ভাবে এই গীর্জা ‘হাসনাবাদ গীর্জা’ নামেও পরিচিত। গীর্জার পাশেই রয়েছে খ্রিস্টানদের কবরস্থান।

বান্দুরা এলাকার বাসিন্দা আদুরি গমেজ জানান, গীর্জাটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। তবে যেহেতু এটি একটি ধর্মীয় উপাসনালয়, তাই কিছু নিয়ম-কানুন মেনে প্রবেশ করা উচিত।

রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান এলাকার হযরত গোলাপ (রহ.) এর মাজার এলাকা থেকে নবাবগঞ্জ হয়ে বান্দুরা আসা যায়। সেখান থেকে ইজিবাইক বা রিকশায় করে হাসনাবাদ গীর্জায় যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে যাওয়া ও আসা মিলিয়ে জনপ্রতি আনুমানিক ২০০ টাকা খরচ হয়।

এই গীর্জা শুধু একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানই নয়, বরং এটি ধর্মীয় সহনশীলতা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের এক অপূর্ব নিদর্শন।

ইএইচ