পাবনায় চলতি মৌসুমে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষে কিছুটা লোকসানের মুখে পড়লেও হালি বা চারা পেঁয়াজ বিক্রি করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন চাষিরা। বর্তমানে বাজারে পেঁয়াজের দাম প্রতিকেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা হওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।
পেঁয়াজ চাষিরা জানিয়েছেন, প্রতিকেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ পড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। তবে বাজারে শুরুতে প্রতি মণ পেঁয়াজ ১,০০০ টাকায় বিক্রি হওয়ায় তারা ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। মজুতদারদের তৎপরতায় হঠাৎ দাম দ্বিগুণ হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে।
চাষিরা বলছেন, পেঁয়াজ চাষে অধিকাংশই ঋণগ্রস্ত ছিলেন। বেসরকারি সংস্থা, সার ও কীটনাশকের দোকানে বাকি পরিশোধের জন্য অনেকে বাধ্য হয়ে শুরুতেই পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই পেঁয়াজ জমা রাখতে পারেননি। তবে যাদের সেই সামর্থ্য রয়েছে, তারা ভালো দামের আশায় সংরক্ষণ করে রেখেছেন।
চাষিদের মতে, এবারে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। ফলনও তুলনামূলক কম—গড়ে ৪০ থেকে ৪৫ মণ। অনেকেই ঋণের চাপে অর্ধেকের বেশি পেঁয়াজ আগেই বিক্রি করে দিয়েছেন।
পাবনার বিভিন্ন পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় হাট-বাজারে ভোর থেকেই চাষিরা পেঁয়াজ নিয়ে আসছেন। বর্তমানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ১৬০০ থেকে ২২০০ টাকায়, যা আগে ছিল ১২০০-১৩০০ টাকা।
একজন বিক্রেতা জানান, “চৈত্রের শেষ এবং বৈশাখের শুরুতে পেঁয়াজ বাঁধাই শুরু হয়। সে সময় ব্যাপারীরা কিনতে চায় না, এখন তারা মজুতের জন্য বেশি দামে কিনছেন।”
পাবনা সদর উপজেলার এক বিক্রেতা বলেন, “এখন বাঁধাইয়ের সময়, তাই দাম একটু বেড়েছে। আমদানি বন্ধ থাকায় দাম বাড়ছে। এতে আমরা খুশি।”
পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, মেহেরপুরের পেঁয়াজ বাজারে না থাকায় এবং কিছু মানুষ পেঁয়াজ মজুত করায় দাম বাড়ছে। আমদানিও বন্ধ, যা চাষিদের জন্য ইতিবাচক।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক জানান, জেলায় এবার হালি পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৪ হাজার হেক্টর, বাস্তবে আবাদ হয়েছে আরও বেশি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন, উৎপাদন হয়েছে ৭ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন।
তিনি আরও জানান, “চাষিদের ঘরে এখনও প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ পেঁয়াজ রয়েছে। আমরা তাদের ‘এয়ার ফ্লো’ প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহ দিচ্ছি। বর্তমানে সুজানগরে ৬০টি, পাবনা সদরে ৩টি এবং সাঁথিয়ায় ৫টি এয়ার ফ্লো মেশিন ব্যবহার হচ্ছে।”
তিনি বলেন, বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছে।
ইএইচ