টাঙ্গাইলের যৌনপল্লী যেন মাদকের নিরাপদ আশ্রয়স্থল

রাইসুল ইসলাম লিটন, টাঙ্গাইল প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ০৬:২২ পিএম
টাঙ্গাইলের যৌনপল্লী যেন মাদকের নিরাপদ আশ্রয়স্থল

প্রায় ২০০ বছরের পুরনো টাঙ্গাইল পৌর এলাকার কান্দাপাড়া যৌনপল্লী। এখানে প্রায় ৮০০ ঘরে বসবাস করেন পাঁচ শতাধিক যৌনকর্মী। মূলত দেহ ব্যবসার জন্য গড়ে ওঠা এই পল্লীতে বর্তমানে মাদক ব্যবসা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা ও দেশি-বিদেশি মদসহ বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য এখানে সহজেই মেলে। এতে যৌনপল্লী রূপ নিয়েছে মাদকসেবীদের এক ‘নিরাপদ আশ্রয়স্থলে’।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদকের সহজলভ্যতা এবং মাদকসেবীদের চলাফেরা এই পল্লীর পরিবেশকে আরও নাজুক করে তুলেছে।

যৌনকর্মীরা জানান, তারা সারিবদ্ধভাবে খদ্দেরের জন্য বসে থাকলেও খদ্দের পাওয়া এখন আগের মতো সহজ নয়। বরং যারা মাদক বিক্রি ও সেবনের সঙ্গে জড়িত, তাদের উপস্থিতি ও প্রভাব বেশি।

যৌনকর্মীদের মধ্যে যারা মাদকের সঙ্গে যুক্ত নন, তাদের জীবন আরও দুর্বিষহ। তিনবেলার খাবার জোগাড় করাও কঠিন হয়ে পড়ে অনেকের জন্য। তবে কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে—সুশ্রী ও আকর্ষণীয় যৌনকর্মীরা তুলনামূলক ভালো আয় করেন।

স্বাস্থ্যসেবার দিক থেকেও যৌনপল্লীর পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ। এইডসসহ নানা যৌনবাহিত রোগের সঠিক পরিসংখ্যান নেই। অধিকাংশ খদ্দের নিরাপদ যৌনমিলনে আগ্রহী না হওয়ায় অনিরাপদ যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য হন যৌনকর্মীরা।

উত্তরাঞ্চল থেকে টাঙ্গাইলে আসা রিকশাচালকদের মধ্যে অনেকেই যৌনপল্লীর খদ্দের হিসেবে যুক্ত হচ্ছেন বলে জানান যৌনকর্মীরা।

যৌনকর্মীদের জীবনের করুণ চিত্র

সুমি (ছদ্মনাম) বলেন, “১০ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল। গার্মেন্টসে চাকরির আশায় ঢাকায় যাই, স্বামীর বন্ধুর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে যায়। পরে সেই বন্ধু ব্যবসার কথা বলে টাঙ্গাইলে এনে আমাকে এই পল্লীতে রেখে চলে যায়। এরপর তালাবদ্ধ ঘরে খদ্দেরের জন্য অপেক্ষা করে থাকি। এখন সব মেনে নিয়েছি। আমার একটি সন্তান রয়েছে। বাড়ির লোকজন জানে, আমি চাকরি করি।”

ময়মনসিংহ থেকে আসা যৌনকর্মী মিতু (ছদ্মনাম) বলেন, “৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি। এখন আর আগের মতো আয় হয় না, তবে কিছু খদ্দের আছে। তারা সুখ কেনে, কেউ কেউ এখানে নিরাপদে নেশাও করে যায়।”

সন্ধ্যা (ছদ্মনাম) জানান, “এখন আর আগের মতো আয় হয় না। সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহযোগিতা নেই। খাওয়া আর বাসা ভাড়ার টাকাই জোগাড় করতে পারি না। দেনা বাড়ছে প্রতিদিন। আমরা মানবিকতা ও নাগরিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত।”

টাঙ্গাইল জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “যৌনকর্মীদের আমরা সামাজিক প্রতিবন্ধী হিসেবে বিবেচনা করি। তবে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে তাদের জন্য টাঙ্গাইলে কোনো কার্যক্রম নেই।”

যৌনকর্মীরা মনে করেন, তাদেরও ভোটাধিকার রয়েছে, তারা রাষ্ট্রের নাগরিক। তাই মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তার প্রশ্নে রাষ্ট্রকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

ইএইচ