নাগরপুরে অসহনীয় তীব্র গরমে বিপাকে দিনমজুর-শিক্ষার্থীরা

নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০২৫, ০৪:৩৩ পিএম
নাগরপুরে অসহনীয় তীব্র গরমে বিপাকে দিনমজুর-শিক্ষার্থীরা

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় চলমান তীব্র গরমে জনজীবন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড সূর্যতাপ ও তাপপ্রবাহের কারণে উপজেলার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

সকাল ১০টার পর থেকেই রাস্তাঘাট ফাঁকা হতে শুরু করে, বিশেষ করে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চারপাশে নেমে আসে নিস্তব্ধতা।

নাগরপুর বাজার, সহবতপুর বাজারসহ বিভিন্ন মোড় ও এলাকায় দেখা গেছে—মানুষ গাছের ছায়া কিংবা দোকানের নিচে আশ্রয় নিচ্ছেন কিছুটা স্বস্তির আশায়।

খোলা আকাশের নিচে কাজ করা রিকশাচালক ও দিনমজুররা জানাচ্ছেন, এই গরমে কাজ চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত কষ্টকর। স্থানীয় আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, নাগরপুরে কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে। এর সঙ্গে আর্দ্রতা বৃদ্ধির কারণে গরম আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে।

তীব্র গরমে শিক্ষা কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। শ্রেণিকক্ষে ফ্যান চললেও স্বস্তি মিলছে না। নাগরপুর সরকারি কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, “এই গরমে ক্লাসে বসে থাকা যায় না। মাথা ঘোরে, শরীর দুর্বল লাগে।”

এসএসসি পরীক্ষার্থীরা জানায়, এই অসহনীয় গরমে পরীক্ষা দিতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। পরীক্ষার হলে অতিরিক্ত গরমে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। নাগরপুর সরকারি যদুনাথ পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের এক এসএসসি পরীক্ষার্থী বলেন, “রোদে এসে হলে ঢুকতেই মাথা ঘুরে যায়। অনেক সময় প্রশ্ন ভালোভাবে পড়াও সম্ভব হয় না।”

অভিভাবকরাও বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এক অভিভাবক বলেন, “এই গরমে সন্তানরা পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে, চিন্তায় থাকি। তাপপ্রবাহে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, সেই দোয়াই করি।”

নাগরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হিটস্ট্রোক, পানিশূন্যতা ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন বহু মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছেন। শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে এসব সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. হাফিজুর রহমান বলেন, “তীব্র গরমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিশু, বৃদ্ধ এবং যাদের আগে থেকেই স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে। আমরা সবাইকে পর্যাপ্ত পানি পান, হালকা খাবার গ্রহণ এবং রোদে বের না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।”

নাগরপুর উপজেলার মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১২টি, যেখানে বসবাস করছেন প্রায় ৩ লাখ মানুষ। কয়েকদিন ধরে চলমান গরমে প্রতিটি বাড়ি, বাজার ও প্রতিষ্ঠান যেন স্তব্ধ হয়ে পড়েছে।

যদিও এখনো কোনো দুর্ঘটনা বা প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি, তবে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিনেও উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। ফলে গরমের এই তীব্রতা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইএইচ