- মাছের বরফে তৈরি হচ্ছে বাহারী শরবত
- এ যেন দেখার কেউ নেই
- সতেচন মহলের দাবি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ
গরমে শরীর থেকে বের হয় ঘাম। বেশি ঘামের কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তি এবং যারা বাইরে কাজ করেন, প্রয়োজন মতো পানি পান করার সুযোগ পান না, তারাই মারাত্মক পানিস্বল্পতার শিকার হন। তাই এ ঘাটতি পূরণের জন্য প্রয়োজন প্রচুর পানি ও শরবত পান করা।
শুধু পানি সব সময় খেতে ভালো লাগে না। তাই এ তাপদাহে তৃষ্ণা মেটাতে অনেকেই পান করেন রাস্তার পাশে থাকা ঠান্ডা পানি ও লেবু দিয়ে বানানো শরবত ও জুস। এক্ষেত্রে রাস্তায় পাওয়া বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ দোকানের শরবত-জুসের ওপরই নির্ভর করতে হয় কর্মব্যস্ত নগরবাসীর।
গরমের সময় রাস্তাঘাটে পাওয়া যায় লেবুর শরবত, বেলের শরবত, কাঁচা আমের শরবত সহ নানান রকম শরবত। সস্তা হওয়াতে গরমে তৃষ্ণা মেটাতে অনেকেই এসব শরবত পান করেন। প্রচণ্ড তাপদাহে পথিকের তৃষ্ণা মেটাতে এসব শরবতের কোন জুড়ি নেই।
বিভিন্ন ধরনের ফলের শরবত স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী হলে রাস্তার পাশের শরবত বিপদ জনক বলে দাবি করেন চিকিৎসকরা। বিশেষ করে লেবু ও বিভিন্ন ফলের শরবত খুবই উপকারী। তবে সেটা অবশ্যই স্বাস্থ্যকর উপায়ে তৈরি করতে হবে। বিশুদ্ধ পানি, পরিষ্কার ফল ও চিনি ব্যবহার করে শরবত তৈরি করা হলে তা অত্যন্ত উপকারী।
তবে রাস্তার পাশে ফুটপাথে বিক্রি করা শরবত তৈরির ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যকর পানি ব্যবহার করা হয় না। ফলে ডায়রিয়া-জন্ডিসসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
কিন্তু কর্মব্যস্ত জীবনে অসহনীয় গরমে এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত পান কিছুটা স্বস্তি আনে নগরবাসীর জীবনে। তাই একটু শান্তির ছোঁয়া পেতে নানা ধরনের পানীয় এবং মৌসুমি ফলের এসব শরবত-জুস তৃপ্তির সঙ্গে পান করে ক্লান্ত পথিক।
দেখা গেছে, চৈত্র মাস শেষ, চলছে বৈশাখ মাস। তবে মূলত বেশিরভাগই চৈত্র মাসে তাপদাহ থাকে অনেকটা বেশি। কিন্তু এবার বৈশাখের অধিক মাস শেষের পথে হলেও গোটা দক্ষিণাঞ্চলের পাশাপাশি দেশজুড়ে চলছে প্রচণ্ড তাপদাহ। এ নাভিশ্বাসের গরমে জীবিকার তাগিদে বাইরে বের হওয়া মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত।
রিকশাচালক রহিম মিয়া বলেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রায় শরীর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে পানি। এ অবস্থায় পিপাসা ও শরীরের পানির চাহিদা মেটাতেই পান করতে হচ্ছে রাস্তার পাশে থাকা দোকানের শরবত। তিনি আরো বলেন, ভাই আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। তাই রাস্তার পাশের খাবারই হলো আমাদের ভরসা। শুধু তাই নয় ঝড়-বৃষ্টি ও গরম এটাই হলো আমাদের জীবন।
তবে এসব শরবত স্বাস্থ্যসম্মত কিনা সেটা নিয়েও যেন ভাবনা নেই কর্মজীবী ও খেটে খাওয়া এসব মানুষের।
বরিশালের সচেতন নাগরিক এ.এস.এম একরামুল হুদা বাপ্পী বলেন, রাস্তার পাশের ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের শরবত কোন নিরাপদ নয়। তাদের শরবতের পানি, বরফ কোথা থেকে আসে ঠিক নেই। এ শরবত পান করে পেটের অসুখ সহ নানা রোগ হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, কিছুদিন আগে আমি পোর্ট রোড বাজারে বাজার করতে গিয়ে দেখতে পাই, কুলফি মালাই বিক্রেতারা পাতিলের মধ্যে প্রথমে মাছের বকর দিচ্ছে। পরে বরকের মধ্যে কুলফি মালাই রাখেন। পাশাপাশি রাস্তার পাশে থাকা শরবতের দোকানিরা প্রতিনিয়ত এই মাছ বাজারের ভিতরে থাকা বরফকল দিয়ে কিনছে বরফ। তবে তারা যে বরফ কিনে শরবতের পানির সাথে ব্যবহার করে মানুষকে খাওয়াচ্ছে। সেই বরফ গুলো হচ্ছে মাছ নষ্ট না হওয়ার জন্য যে বরফ গুলো তৈরি করা হয় সেই বরফ। আর এই বরফ দিয়ে তৈরি করা শরবত খাচ্ছে মানুষ। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি যেন দিন দিন বেড়েই চলছে। এই দোকানীদের যেন দেখার নেই কেউ।
বরিশাল সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল প্রতিবেদককে বলেন, রাস্তার পাশে অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয় থেকে ডায়েরিয়াসহ নানা ধরনের সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে বরিশালবাসী। সে জন্য এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলার পরামর্শ তাদের। এই সময় পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস, বমি ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। তাই প্রচুর পরিমাণে ওরাল স্যালাইন, পানি ও পানিজাতীয় খাবার, ডাবের পানি পান করার পরামর্শ দেন তিনি। এতে শরীরে পানি ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
এদিকে নগরীর জেলখানার মোড়, লঞ্চঘাট, বাস র্টামিনাল,স্কুলকলেজের সামনে সহ ব্যস্ততম বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, ভ্রাম্যমাণ শরবত বিক্রেতারা যে ফিলটার বক্সে শরবত বিক্রি করছেন, তার বেশির ভাগেরই পানি ফিলটার করার সরঞ্জাম নেই। শুধু ফ্রেম আছে। জেলখানার মোড়ের ফুটপাতের শরবত বিক্রেতা কালাম জানান, দিনে ২শ’ থেকে ৩শ’ গ্লাস শরবত বিক্রি হয় প্রতিদিনই। চাপ কল থেকে পানি আনা হয়।
লেবু শরবত পান করছিলেন রিকশাচালক মন্নান। তিনি বলেন, লেবু দেখলেই খেতে ইচ্ছা করে। পরে প্রতিবেদক তাকে প্রশ্ন করলেন পানি বিশুদ্ধ কিনা জেনে খাওয়া দরকার কিনা। প্রতিবেদকের প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন তৃষ্ণা পেয়েছে তাই খেলাম। গরীব মানুষের আবার ভালো মন্দ দেখে খাওয়ার কি সময় হয়।
মন্নান আরো বলেন, এই গরমে যেখানে শরীর থেকে ঘাম বের হচ্ছে। সেখানে আবার ভালো-মন্দ দেখা গরিবের কপালে এটা নেই।
পথচারী লিটন বলেন, রাস্তার পাশ থেকে দিনে প্রায় ২/৩ গ্লাস লেবুর শরবত কিনে খাই। এটা পান করলে গরমে তৃপ্তি পাই। ভালো-খারাপ বুঝি না।
এ বিষয়টি নিয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. রেজওয়ানুর আলম বলেন, ভ্রাম্যমাণ শরবত বিক্রেতাদের পানি, বরফ কোথা থেকে আনা হয় তা না জেনেই অনেকেই সেটা পান করে থাকে। আর এসব শরবতে ব্যবহার করা বিট লবনও যা কোন নিরাপদ নয়। তৃষ্ণা নিবারণের এ অসচেতনতা থেকে বিভিন্ন ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষের। তাই ভ্রাম্যমাণ দোকানের শরবত ও বিভিন্ন খাবার থেকে সকলকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
আরএস