ফেনীতে চীন-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা, ভেঙ্গে পড়া মুসাপুর ক্লোজার পুনঃনির্মাণ, বল্লামুখা বেড়িবাঁধ দ্রুত নির্মাণ, ঝুঁকিপূর্ণ লালপোলে ফ্লাইওভার বা আন্ডারপাস নির্মাণ এবং গুদাম কোয়ার্টার রেলক্রসিং এ ফ্লাইওভার নির্মাণের দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা।
রোববার বিকেলে ফেনীর সর্বস্তরের নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়—দেশের উল্লেখযোগ্য রেমিটেন্সসমৃদ্ধ, সম্ভাবনাময় ও আন্তঃসংযোগ জেলা হিসেবে ফেনী একটি পরিচিত নাম। শমসের গাজী, জহির রায়হান, ভাষা শহীদ আবদুস সালাম ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মস্থান ফেনী। দেশের সর্ববৃহৎ শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে এ জেলার সোনাগাজী উপজেলা লাগোয়া। ফেনী জেলা বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা হওয়া সত্ত্বেও বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত এ জেলাটি।
স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়—ফেনী জেলার জনগণের মৌলিক অধিকার চিকিৎসা সেবা। দেশের অধিকাংশ জেলায় মেডিকেল কলেজ থাকলেও ফেনীতে কোন মেডিকেল কলেজ নেই। নেই উচ্চ শিক্ষার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়। মুসাপুর ক্লোজার ভেঙে ফেনী ও নোয়াখালী দুই জেলার মানুষের জন্য মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে পরশুরাম সীমান্তে বল্লামুখা বাঁধ ভেঙে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে, যার ফলে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলার লাখ লাখ মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে এবং অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লালপোল ক্রসিং দিয়ে ফেনী সদর উপজেলা, সোনাগাজী উপজেলা ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের যাতায়াত। অতিরিক্ত চাপের কারণে এখানে প্রতিদিন প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। ঝুঁকিপূর্ণ লালপোলে ফ্লাইওভার বা আন্ডারপাস নির্মাণ জরুরি।
এছাড়া, শহরের গুদাম কোয়ার্টারে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল ক্রসিং এ আন্ডারপাস বা ফ্লাইওভার না থাকায় প্রতিদিন আটকে পড়ে শতশত রোগী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও পথচারী। অনেক রোগী রাস্তার ওপর মৃত্যুকূলে ঢলে পড়ে।
এসব সমস্যার সমাধান ও দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ফেনী জেলার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ বিভিন্ন সময়ে মিছিল, মিটিং ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে, তবে আজও ফেনীবাসী কোন সমাধান পায়নি।
স্মারকলিপিতে ফেনী জেলার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত প্রায় ৫০ লাখ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত আরো প্রায় এক কোটি গণমানুষের স্বাস্থ্য সেবায় চীনের অর্থায়নে প্রস্তাবিত “চীন-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতাল” স্থাপন, একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, মুসাপুর ও বল্লামুখা পয়েন্টে টেকসই ক্লোজার ও বেড়িবাঁধ নির্মাণ, লালপোল ফ্লাইওভার বা আন্ডারপাস নির্মাণ, এবং শহরের গুদাম কোয়ার্টার রেলক্রসিং এ ফ্লাইওভার ব্রীজ নির্মাণের জন্য প্রধান উপদেষ্টার সদয় দৃষ্টি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।
স্মারকলিপি প্রদান করেন—ফেনী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মো. এয়াকুব নবী, গাজী হাবিব উল্লাহ মানিক, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জেলা সেক্রেটারি মুহাম্মদ আবদুর রহীম, ইসলামী আন্দোলনের জেলা সেক্রেটারী মাওলানা একরামুল হক ভূইয়া, হেফাজতে ইসলামের জেলা সেক্রেটারী মাওলানা ওমর ফারুক, এবি পার্টি জেলা সদস্য সচিব অধ্যাপক ফজলুল হক, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় সদস্য জাহিদুল ইসলাম সৈকত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফেনীর সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাইয়ুম সোহাগ প্রমুখ।
ইএইচ