শহীদ হৃদয়ের মাকে বঞ্চিত করে পিতার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি প্রকাশিত: এপ্রিল ২৮, ২০২৫, ০৩:১৭ পিএম
শহীদ হৃদয়ের মাকে বঞ্চিত করে পিতার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত তামিন হৃদয়ের নামে বেসরকারি বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন থেকে বরাদ্দকৃত আর্থিক সহায়তা এবং সুযোগ-সুবিধা থেকে তার মাকে বঞ্চিত করে একাই সমস্ত টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে নিহতের পিতা তমিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে।

শুধু তাই নয়, সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকেও তামিনের গর্ভধারিণী মায়ের নাম পুরোপুরি বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি, তামিনের পিতা বিভিন্ন মাধ্যমে মিথ্যা মানহানিকর মন্তব্য করে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

এ ঘটনার প্রতিকার ও সরকারি সুযোগ-সুবিধা সমহারে বণ্টনের ব্যবস্থা করতে তামিন হৃদয়ের মা রুমি বেগম গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর নরসিংদী জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

তামিন হৃদয়ের মা রুমি বেগমের লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালে শিবপুর উপজেলার দক্ষিণ সাধারচর গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিনের ছেলে তমিজ উদ্দিন মীরের সাথে পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নের দক্ষিণ দেওড়া গ্রামের মজনু কাজীর মেয়ে রুমি বেগমের পারিবারিক আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে, তামিন হৃদয়। দাম্পত্য জীবনে বনিবনা না হওয়ায় স্বামী তমিজ উদ্দিন ৩য় বিয়ে করেন এবং নিহতের মা রুমি বেগমের ২য় বিয়ে হয়। সংসার জীবন আলাদা হলেও তামিন হৃদয়ের সাথে তার মায়ের নিয়মিত যোগাযোগ, খোঁজ-খবর, আসা-যাওয়া ছিল।

গত ১৯ জুলাই শিবপুর উপজেলার ইটাখলা মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় তামিন হৃদয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন থেকে তামিন হৃদয়ের নামে আর্থিক সহায়তা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, যা তার গর্ভধারিনী মাকে জানানো হয়নি। সেখান থেকে বরাদ্দকৃত ক্ষতিপূরণের কোনো অংশও তামিনের মা রুমি বেগমকে দেওয়া হয়নি। সম্পূর্ণ টাকা তামিনের পিতা তমিজ উদ্দিন নিজের কব্জায় রেখেছেন। বর্তমানে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে যে, জীবিত মাকে মৃত দেখিয়ে সরকারি বরাদ্দকৃত সব অনুদান এবং সুবিধা তামিনের পিতা একাই আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছেন।

এ ব্যাপারে তামিনের মা রুমি বেগম বলেন, লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে তার প্রাক্তন স্বামী তমিজ উদ্দিন বিভিন্নভাবে তাকে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছেন। তাতে রাজি না হলে তাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে মিথ্যাচার ও ভয়-ভীতি দেখানোর হুমকি দিয়েছেন। তিনি প্রশাসনের কাছে এসব বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এবং ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ পরিবারকে সরকারি সহায়তা সঠিকভাবে বণ্টন করার দাবি করেছেন।

তবে এ বিষয়ে তামিন হৃদয়ের পিতা তমিজ উদ্দিন মীর সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তিনি জানান, তামিন হৃদয়ের মা রুমি আক্তারের করা অভিযোগ মিথ্যা এবং বানোয়াট। তিনি বলেন, সরকারিভাবে কিছু অংশ তাকে দেওয়া হয়েছে, এবং জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকেও টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে শিবপুর উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অঙ্গীকারনামা দেওয়ার বিষয়ে তিনি তা স্বীকার করেছেন।

নরসিংদী জজ কোর্টের এডভোকেট মাইন উদ্দিন সোহেল জানান, আইন অনুযায়ী নিহত ছেলের ওয়ারিশ থেকে মাকে বঞ্চিত করার কোনো সুযোগ নেই। সন্তানের স্থলাভিষিক্ত ওয়ারিশগণ, পিতা-মাতা উভয়ই সকল সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকারী।

এ বিষয়ে শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা ইয়াসমিন জানান, আমাদের এখানে ও ডিসি অফিসে তামিন হৃদয়ের বাবা এবং মা দুজনেরই ডকুমেন্টস রয়েছে। গত সপ্তাহে তারা দুইজনই লিখিত অঙ্গীকারনামা দিয়েছেন। আইন অনুসারে আমাদের পক্ষ থেকে যা হওয়া, তাই হবে।

এ বিষয়ে নরসিংদী জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী জানান, তামিন হৃদয়ের বাবা এবং মা’কে আইন অনুযায়ী সাহায্য-সহযোগিতা ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। আইনে যা আছে, আমরা তাই করব।

ইএইচ