বরিশালে মেট্রিক পাশ ‘ভুয়া’ ডাক্তার গ্রেফতার, এক বছরের সাজা

বরিশাল ব্যুরো: প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২৫, ০৬:১৬ পিএম
বরিশালে মেট্রিক পাশ ‘ভুয়া’ ডাক্তার গ্রেফতার, এক বছরের সাজা

বরিশালের উজিরপুরে এক মিথ্যা পরিচয়ে বছরের পর বছর ধরে অপচিকিৎসা চালিয়ে আসা "ভুয়া এমবিবিএস" ডাক্তার রেজাউল করিমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাদরাসা থেকে দাখিল পাশ করা রেজাউল, যিনি নিজেকে একজন এমবিবিএস ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিতেন, তাকে আজ মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) গ্রেফতার করে স্থানীয় প্রশাসন। তার বিরুদ্ধে অপচিকিৎসার অভিযোগে এক বছরের সাজা প্রদান করা হয়েছে।

উজিরপুর উপজেলার পশ্চিম সাতলা গ্রামের ‘মায়ের দোয়া ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’ গত কয়েক বছর ধরে চিকিৎসা প্রদান করছিলেন রেজাউল করিম। তবে, তার ডিগ্রি ছিল ভুয়া এবং কোনো প্রামাণ্য চিকিৎসা সনদও ছিল না। ক্লিনিকটির কার্যক্রমে সনদ ছাড়াই রোগীদের চিকিৎসা প্রদান, অপারেশন করা এবং অস্ত্রোপচারসহ বিভিন্ন জটিল চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করার অভিযোগ ওঠে। তার অপচিকিৎসায় একাধিক রোগীর মৃত্যুর ঘটনা এবং অনেকে শারীরিকভাবে পঙ্গু হওয়ার কথা জানা গেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রেজাউল করিম পেশাদার চিকিৎসকের সনদ ছাড়াই গুরুতর রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করতেন এবং এমনকি মিথ্যা পরিচয়ে নিজেকে সাংবাদিক কিংবা টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক পরিচয় দিয়ে তার অপরাধে থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করতেন। তিনি ‘চার্টার অব অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল অব ইন্ডো অ্যালোপ্যাথি অ্যান্ড কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিন’ নামের সনদপত্রও দেখাতেন, যা তদন্ত করে কোনো বৈধতা পাওয়া যায়নি।

অভিযানের সময় উজিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি, মো. মাইনুল ইসলাম খান জানান, "রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ছিল, যার মধ্যে অপচিকিৎসা এবং রোগীদের যৌন হয়রানি সহ মারধরের অভিযোগও রয়েছে। তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে।"

গত ২৭ এপ্রিল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও তাকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছিল, তবে তার অপরাধে কোনো রকম ছাড় দেওয়া হয়নি। আদালত তাকে এক বছরের সাজা দিয়েছে এবং তার অপচিকিৎসা বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ধরনের ঘটনা জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ানোর পাশাপাশি সমাজে চিকিৎসার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করে দেয়। তাই স্থানীয় প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এর বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

এ ঘটনায় এলাকার মানুষ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের এই পদক্ষেপে সন্তুষ্ট হলেও, ভবিষ্যতে যেন এমন অপরাধ প্রতিরোধ করা যায়, সে জন্য আরও কার্যকরী নজরদারির আশ্বাস দিয়েছেন কর্মকর্তারা।

বিআরইউ