বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছে ২০০ কোটি ডলার চেয়েছে বাংলাদেশ

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২২, ০৪:৩১ পিএম
বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছে ২০০ কোটি ডলার চেয়েছে বাংলাদেশ

বিশ্বব্যাংক এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) কাছে ২০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ সরকার। গত বুধবার (০৩ আগস্ট) রয়টার্স প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ তার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির জন্য এ সহায়তা চায়।

তবে রয়টার্সের অনুরোধ সত্ত্বেও বিশ্বব্যাংক এবং এডিবির ঋণ সহায়তার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোন মন্তব্য করেনি বাংলাদেশ অর্থ মন্ত্রণালয়।

ব্লু মবার্গ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ দুটি দাতা সংস্থাকে ঋণ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। প্রত্যেকের কাছে ১০০ কোটি ডলার করে চাওয়া হয়েছে। 

আন্তর্জাতিক বাজারে চড়া জ্বালানি মূল্য এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব যেভাবে অর্থনীতিতে পড়ছে, তা মোকাবেলার জন্য এ অর্থ দরকার বলে বাংলাদেশের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টির কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।

এর আগে গত ২৪ জুলাই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর আগাম ব্যবস্থা হিসেবে সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ঋণ চায়। এর কয়েকদিন পরই বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছেও সহায়তা চাইল বাংলাদেশ।

আমদানি বেড়ে যাওয়া ও প্রবাসী আয় কমার কারণে দেশে ডলারের চরম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে পতন হচ্ছে টাকার মান। 

মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি ১০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকার মতো তুলে নেয়া হয়েছে।

মূল্যস্ফীতির কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা সংকুচিত হচ্ছে এবং আমদানি ব্যয়ও কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জুলাইয়ে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যায়। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকা রিজার্ভ গত বছরের আগস্টে প্রথমবারের মতো ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।

চলতি বছরের শুরুতে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে। সদ্যসমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ দিন রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। জুনে শেষ হওয়া অর্থবছরে দেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ৩৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।

তবে গত ২৭ জুলাই অর্থশন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, শুধু আইএমএফ নয়, দাতারা কী শর্তে ঋণ দিতে চাচ্ছে, আমরা সেটা দেখব। তারা যদি ইতিবাচকভাবে এগিয়ে আসে এবং কম সুদহারে পাই, তাহলে আমরা ঋণ নেব। আমরা বিশ্বব্যাংক ও এডিবি’র কাছেও যাব।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফের কাছে বাংলাদেশ তিন বছরের জন্য ৪৫০ কোটি ডলার চেয়েছে। আইএমএফকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, কভিড-১৯-এর কারণে ২০২০ সাল শুরুর আগে থেকেই বিশ্ব অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

এর প্রভাব মোকাবেলায় ঠিক সময়ে প্রণোদনা প্যাকেজ প্রণয়ন করে সেগুলো সফলভাবে বাস্তবায়িত করেছে বাংলাদেশ। কভিডে বাংলাদেশের মানুষের কম আক্রান্ত হওয়া, মৃত্যুর হার কম থাকা ও ভ্যাকসিন দেয়ার উচ্চহারের কারণে ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকেই অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়েছে।

প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর কারণে রফতানি খাত প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছে এবং কৃষি, উৎপাদনশীল খাত ও সেবা খাত কার্যকরভাবেই ফিরে এসেছে। 

তবে এখন সময় একটু খারাপ (ক্রিটিক্যাল টাইম) বলে জরুরি ভিত্তিতে লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখা ও বাজেট সহায়তা বাবদ বাংলাদেশের অর্থের দরকার।

এদিকে নিয়মিত সফরের অংশ হিসেবে গত ১৪ জুলাই আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরে আসে। সফরকালে সরকারপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। 

আইএমএফের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রাহুল আনন্দ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। সফরকালে দলটি অর্থ মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ইআরডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সফর শেষে ২২ জুলাই ঢাকা ত্যাগ করে আইএমএফ প্রতিনিধি দল।

জানা গিয়েছে, আইএমএফ থেকে ঋণের বিষয়ে এর আগেও আলোচনা হয়েছিল। তবে বেশকিছু শর্তের কারণে সে আলোচনা আর এগোয়নি। সংস্থাটি বরাবরই বাজেট ভর্তুকি কমিয়ে আনার পরামর্শের পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো ও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার শর্ত দিয়ে এসেছে।

গত বছরের অক্টোবরে আইএমএফ সারা বিশ্বে করোনার সংকট মোকাবেলায় ১৯০টি সদস্য দেশের জন্য ৬৫০ বিলিয়ন ডলার সমমানের এসডিআর (স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস) ঘোষণা করে। 

যার মধ্যে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু সরকার ওই সময় এসডিআর নেয়নি।


আমারসংবাদ/টিএইচ