দেশে নানা অজুহাতে গত কয়েক মাস ধরেই অস্থিতিশীল নিত্যপণ্যের বাজার। রাজধানীর বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবারো বেড়েছে চাল, সবজি, মাছ, মুরগি ও ডিমের মতো নিত্যপণ্যের দাম।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাড্ডা ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
চালের বাজার:
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মগবাজার, মালিবাগ ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে মোটা চালের কেজি (স্বর্ণা ও লতা) বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকায়।
তিন দিন আগে এই চাল বিক্রি হয়েছে ৫২ থেকে ৫৩ টাকায়। কেজিতে দুই টাকা বেড়ে মাঝারি চাল (বিআর-২৮) ৫৫ থেকে ৬০ এবং চিকন চাল (মিনিকেট) ৭৪ থেকে ৭৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে।
মালিবাগ বাজারের খালেক রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী জাকির হোসেন জানান, গত সাত-আট দিনে কেজিতে চালের দাম কমেছিল দুই থেকে তিন টাকা।
চাল রপ্তানিতে ভারত শুল্ক্ক আরোপের খবরে দেশের চালের মোকামে (মিল পর্যায়ে) বস্তাপ্রতি দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকার মতো বেড়েছে।
শুধু তাই নয়, অগ্রিম টাকা দিয়েও চাহিদামতো চাল মিলছে না। মোকামে ১০০ বস্তা চালের ক্রয়াদেশ দিলে তারা দেন ৬০ থেকে ৭০ বস্তা।
কিছু সিন্ডিকেট ও মজুতদারের কারণে চালের বাজার অস্থির হচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচ আর খান পাঠান সাকি।
তিনি বলেন, মিলগেট থেকে কয়েক হাত ঘুরে ভোক্তার কাছে পৌঁছায় চাল। এই হাতগুলোর মধ্যেই দামের কারসাজি হয়ে থাকে।
নিত্যপণ্যের বাজার:
সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে মসুরের ডাল কেজিতে ১০ টাকা কমে চিকন মসুর ডাল ১৩০ টাকায় ও মোটা মসুর ডাল ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগের দামেই পেঁয়াজ কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, আমদানি করা রসুন ১১০ থেকে ১২০ টাকায়, দেশি রসুন ৭০ থেকে ৮০ টাকায়, খোলা আটা ৫০ টাকা ও দুই কেজির প্যাকেট আটা ১১৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
চায়ের মধ্যে তাজা ব্র্যান্ডের ৪০০ গ্রাম প্যাকেটে ১০ টাকা বেড়ে ২১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ইস্পাহানি ব্র্যান্ডের ৪০০ গ্রামের প্যাকেট আগের দামেই ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ডিমের বাজার:
চালের মতো ডিমের দামও বাড়ছে। মাসখানেক আগে দাম বেড়ে ডিমের ডজন ১৬০ টাকায় ঠেকেছিল। এরপর তা কমতে শুরু করে। একপর্যায়ে সপ্তাহ দুয়েক আগে তা নেমে আসে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়।
গত ১০ থেকে ১২ দিনে দুই দফা দাম বেড়ে এখন ফার্মের ডিমের (বাদামি) ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়। তবে ফার্মের সাদা ডিমের ডজন ৫ টাকা কমে কেনা যাচ্ছে। হাঁসের ডিমের দামও বেড়েছে। এক ডজন হাঁসের ডিম কিনলে গুনতে হবে ১৮০ থেকে ২১০ টাকা।
মালিবাগ বাজারের ডিম ব্যবসায়ী মো. বাচ্চু বলেন, তিন দিন ধরে টানা বাড়ছে ডিমের দাম। প্রতিদিনই নতুন দর দিচ্ছেন পাইকাররা। এ কারণে গত দুই-তিন দিনে খুচরায় ডজনে দাম বেড়েছে ১০ টাকার মতো।
দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ বলেন, ‘টানা বৃষ্টির কারণে বাজারে ডিমের সরবরাহ কমে গেছে। এ সময় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা বেড়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই এই দাম কমে আসবে।
মাছ বাজার:
সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দামও কিছুটা বেড়েছে। এক কেজি ওজনের রুই ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, দেড়-দুই কেজি ওজনের রুই ২৬০ থেকে ৩০০ টাকায়, আড়াই কেজি থেকে তিন কেজি ওজনের রুই ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাঙ্গাশ ১৬০ টাকায় ও তেলাপিয়া ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় কাতল কেজি ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি সাইজের পাপদা ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ এক হাজার ২০০ টাকায়, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা এবং ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে।
সবজিবাজার:
টানা বৃষ্টির কারণে বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির সরবরাহ কমায় দাম কিছুটা বেড়েছে। বেগুন প্রকারভেদে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, দেশি শসা ৬০ টাকা, পটোল, ঢেঁড়স ও চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা, শিম ১২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০ থেকে ১২০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, গাজর ১৩০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, লাউ আকারভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চালকুমড়া ৪০ টাকা, ছোট আকারের ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
টিএইচ