ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান

আমানতে সুদহার নিয়ে বিভ্রান্তি, বাংলাদেশ ব্যাংকের হুশিয়ারী

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২২, ০৮:৪৩ পিএম
আমানতে সুদহার নিয়ে বিভ্রান্তি, বাংলাদেশ ব্যাংকের হুশিয়ারী

ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানতে সুদহার নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরী হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সুদহার ৭ শতাংশ বেধে দেয়া হলেও এর চেয়ে বেশি হারেই আমানত সংগ্রহ করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। বেশি সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহের বিষয়টি গোপনীয় থাকলেও এখন প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের মৌখিক অনুমতির কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে আমানতের সুদহারে লিখিত বা মৌখিক কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। এমন প্রচারণায় অংশনেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত ও নীতিগত ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

সোমবার (১৭ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জিএম আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণের যে ক্যাপ দেয়া হয়েছে তা এখনো বহাল রয়েছে। এ ব্যাপারে মৌখিকভাবে যে সিদ্ধান্তের কথা বলা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন। যারা নির্দেশ না মেনে আমানত সংগ্রহ করবে তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংরেক সিদ্ধান্তের ছাড়াই এমন বক্তব্য কিভাবে ছড়িয়ে পড়ছে জানতে চাইলে মুখপাত্র আমার সংবাদকে বলেন, ‘এমন কাজ যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত ও নীতিগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি বছরে দেশের ব্যাংকগুলোর মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমানত ও ঋণের সুদহার বেঁধে দেয়। এ ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানতের সুদে ৭ শতাংশ ও ঋণে ১১ শতাংশ ক্যাপ নির্ধারণ করে দেয়। এরপর থেকেই এই নির্ধারিত ক্যাপের মধ্যে থেকে ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করা অত্যন্ত কঠিন বলে দাবি করছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। আমানতের সুদের ক্যাপ তুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বিএলএফসিএ। এই সংগঠনের চেয়ারম্যান আইপিডিসি ফিন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে দেখা করে সুদের ক্যাপ উঠিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। 
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্যাপ তুলে দেয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিন্তু ৮ শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহ করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশনার খবর গণমাধ্যমকে জানিয়েছে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এরপরই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার জানিয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক যে নির্দেশনা দিয়েছে তা পরিবর্তন করা হয়নি। মৌখিকভাবেও এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান ক্যাপ বেঁধে দেয়ার আগে ৭ শতাংশের উপরে আমানত সংগ্রহ করতো তাদের ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয়তা দেখানো হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আগস্ট মাসের তথ্য বিশ্লেষন করে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ম ভেঙ্গে বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ করছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি। সুযোগ পেয়ে তারা এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশনা পাওয়ার মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। তথ্যমতে, যে ২৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাব বিবরণী জমা দিয়েছে তাদের মধ্যে ২৪টিই আমানতে সুদের হার অমান্য করে ৭ শতাংশের বেশি সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহ করেছে। আর ঋণে ১১ শতাংশের বেশি সুদ নিয়েছে মাত্র ৪টি প্রতিষ্ঠান। নির্ধারিত ক্যাপের চেয়ে আমানতে গড়ে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ সুদ ছিল উত্তরা ফাইন্যান্সে। এ ছাড়া প্রিমিয়ার লিজিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স, আভিভা ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স ও সিভিসি ফাইন্যান্সের আমানতের গড় সুদহার ছিল ৯ শতাংশের আশপাশে। এ ছাড়া ঋণে ১১ শতাংশের বেশি সুদ ছিল আভিভা ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, সিভিসি ফাইন্যান্স ও ইসলামিক ফাইন্যান্সের।

আরএইচ/ইএফ