বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাথে এফবিসিসিআই’র স্মারকচুক্তি

এসএমই খাত এড়িয়ে এলডিসি উত্তরণ কঠিন

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২৩, ০৭:৩২ পিএম
এসএমই খাত এড়িয়ে এলডিসি উত্তরণ কঠিন

আগামীর উন্নত বাংলাদেশ গড়তে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতকে এড়িয়ে এলডিসি গ্রাজুয়েশন কঠিন বলে মনে করে ব্যবসায়িদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এই খাতের উদ্যোক্তাদের সহজে ঋণ প্রদানে বুধবার (১১ জানুয়ারি) সংগঠনটির কার্যালয়ে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। 

সে সময় এই মন্তব্য করেন সংগঠনের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। এতে আরো বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু ও বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক মোর্শেদ।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অবদান খুবই কম, মাত্র ২৩ ভাগ। কিন্তু কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বেশ বড় অবদান রাখছে। চাকরিজীবীদের মধ্যে মাত্র ৮ ভাগ সরকারি চাকরি করেন, বাকি যারা আছেন তাদের ৩৬ ভাগই এসএমই খাতে। 

তাই এসএমই উদ্যোক্তারা সহজ শর্তে ঋণ পেলে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের ব্যবসার পরিধি বড় করতে পারবে। ফলে আরও নতুন উদ্যোক্তার সৃষ্টি হবে। তাই এসএমই খাতকে ডেভেলপ করতেই হবে। আমাদের কোর পয়েন্ট হলো সিএমএসএমই। তাদের সহায়তা করতে না পারলে এলডিসি গ্রাজুয়েশন ডিফিকাল্ট হবে।

জসিম উদ্দিন বলেন, এখন শিক্ষিত জনগোষ্ঠী এই খাতের উদ্যোক্তা হয়ে আসছে। ফলে আমরা মিঠা পানির মাছ, শাকসবজি রপ্তানিসহ অনেকক্ষেত্রেই বিশ্বে এগিয়ে আছি। এই খাতে ঋণ খেলাপি হওয়ার শঙ্কা কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের এখন ৯ শতাংশ খেলাপি ঋণ। 

এসবের মধ্যে বড় বড় কোম্পানিগুলোই বেশি খেলাপি। বেসরকারী সংস্থাগুলো (এনজিও) গ্রামাঞ্চল উচ্চ সুদহারে (২২% পর্যন্ত) ঋণ দিয়েও সেই প্রায় শতভাগ তুলে নিয়ে আসছে। আমাদের ব্যাংকগুলো আগ্রহ দেখালে ক্ষুদ্র উদোক্তাদের কাছ থেকেও সহজে ঋণ তুলে নিয়ে আসা সম্ভব। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা খেলাপী হতে চায়না।

আগামীতে রপ্তানির ক্ষেত্রে দুইটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, রপ্তানিতে আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য প্রসেস ফুড ও এগ্রো প্রোডাক্ট। যদি আমরা এর ১৫ ভাগও রপ্তানি করতে পারি তা পোষাক খাতের প্রায় ৮০ ভাগ পর্যন্ত দাঁড়াবে। 

এক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে ব্যাংকগুলোর সাথে বৈঠক করা হয়েছে জানিয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, তরুন ও নারী উদ্যোক্তাদের ২টি সমস্যা। এক্সেস টু ফাইন্যান্স এবং এক্সেস টু মার্কেটিং। আমরা ফাইন্যান্সের জন্য ব্যাংকগুলোর সাথে বসেছি। বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক এক্ষেত্রে সবার আগে এগিয়ে এসেছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, দেশে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি ব্যবসা করছে। এখনও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঋণ নিতে গেলে নানা ধরণের ভোগান্তির শিকার হন। নতুন উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে আর্থিক নীতিমালা সহজীকরণ দরকার বলে জানান তিনি। এই চুক্তি গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালি করবে বলে এসময় মন্তব্য করেন তিনি।

বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক মোর্শেদ বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিতে আমরা ইতোমধ্যে ১৫ টি অ্যাসোসিয়েশনের সাথে চুক্তি করেছি। গত বছর আমাদের প্রদানকৃত ঋণের প্রায় ২৩ শতাংশ গেছে এসএমই খাতে। চলতি বছর এসএমই খাতে অন্তত ৫৫ শতাংশ ঋণ বরাদ্দের লক্ষ্য ঠিক করেছি আমরা। এজন্য আমরা প্রান্তিক পর্যায়ে উপ-শাখা, প্রান্তিক পর্যায়ে শাখা-উপশাখা স্থাপনে জোর দিয়েছি। সেই ধারাবাহিকতায় এই মাসে আমরা রংপুরে নতুন একটি শাখা খুলতে যাচ্ছি।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই’র পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক ও বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের পক্ষে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক মোর্শেদ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি এম এ মোমেন, পরিচালক এম.জি.আর. নাসির মজুমদার, শফিকুল ইসলাম ভরসা, বিজয় কুমার কেজরিওয়াল, হাফেজ হারুন, আমজাদ হোসেন, মোহাম্মদ বজলুর রহমান, মো. নাসের, সৈয়দ সাদাত আলমাস কবীর, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের উপব্যব্স্থাপনা পরিচালক ও সিবিও  কে. এম . আওলাদ হোসেন প্রমুখ।

টিএইচ