বিশ্বের শীর্ষ জ্বালানি তেল উত্তোলক ও সরবরাহকারী দেশ রাশিয়া। তবে অর্থনৈতিকভাবে দেশটিকে কোণঠাসা করতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) পশ্চিমা মিত্ররা নিষেধাজ্ঞার নীতি গ্রহণ করেছে।
সর্বশেষ রাশিয়া থেকে ডিজেল ও পেট্রলসহ পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধ ঘোষণা করেছে ইইউ। পাশাপাশি এসব পণ্যের ওপর প্রাইস ক্যাপ দেয়া হয়েছে, যাতে অংশ নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও জি৭।
রাশিয়ান জ্বালানি খাতের ওপর পশ্চিমা বিশ্বের এমন নীতি আগামী দিনগুলোতে বৈশ্বিক জ্বালানি খাতে ঝুঁকি বাড়াবে বলে মনে করেন সৌদি আরবের জ্বালানিমন্ত্রী যুবরাজ আব্দুল আজিজ বিন সালমান।
গণমাধ্যম আরটি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার ওপর এখন পর্যন্ত ১০ ধাপে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপের সদস্য দেশগুলো। উদ্দেশ্য রাশিয়ার জ্বালানি আয় সংকুচিত করা। সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞাটি কার্যকর হয়েছে ৫ ফেব্রুয়ারি।
যুবরাজ আব্দুল আজিজ বিন সালমান সতর্ক করে বলেন, ‘এসব তথাকথিত বিধিনিষেধ, নিষেধাজ্ঞা ও বিনিয়োগ স্বল্প একটি জটিলতাই ডেকে আনবে। আর তা হলো তীব্র প্রয়োজনের সময় সব ধরনের জ্বালানি সরবরাহের অভাব।’
জ্বালানি তেল রপ্তানিতে শীর্ষ দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের পরই রাশিয়ার অবস্থান। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের পর এবার দেশটি পরিশোধিত জ্বালানি তেলে প্রাইস ক্যাপ বেঁধে দিয়েছে ইইউ, অস্ট্রেলিয়া ও জি৭। এর আওতায় ডিজেলের সর্বোচ্চ দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার এবং অন্যান্য জ্বালানি তেলের দাম সর্বোচ্চ ৪৫ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত বছর রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ওপর প্রাইস ক্যাপ দেয়া হয়েছিল। এক্ষেত্রে প্রতি ব্যারেলের সর্বোচ্চ মূল্য বেঁধে দেয়া হয় ৬০ ডলার। প্রাইস ক্যাপ না মানা হলে রুশ জ্বালানি তেলবাহী কার্গোকে প্রয়োজনীয় সেবা দিতে পারবে না পশ্চিমা কোম্পানিগুলো।
রোমভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিইআরের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, রাশিয়ার জ্বালানি তেল রপ্তানির ওপর ইইউ এসব নিষেধাজ্ঞা দেশটির আয় কমাতে ব্যর্থ হবে। উল্টো এসব পদক্ষেপ জ্বালানি তেলের বাজারকে আরো বেশি অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেবে।
প্রসঙ্গত, সমুদ্রপথে গত বছরের এপ্রিল-নভেম্বর পর্যন্ত রেকর্ড পরিমাণ অপরিশোধিত তেল বিক্রি করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার বড় দুই ক্রেতা ছিল ভারত ও চীন। অনেক কম দামে দেশ দুটিতে জ্বালানি তেল সরবরাহ করেছে রাশিয়া। কম দামে কেনা সেসব তেল পরিশোধন করে পশ্চিমা বিশ্বে রপ্তানি করছে ভারত। এতে বৈশ্বিক তেলের বাজারে ভারতের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
নভেম্বরে রাশিয়া থেকে ভারত দৈনিক আমদানি করেছে গড়ে ৯ লাখ ৯ হাজার ৪০৩ ব্যারেল। তার আগে অক্টোবরে করেছে ৯ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫৬ ব্যারেল। ডিসেম্বরেও রাশিয়ার জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল ভারত। ডিসেম্বরে রাশিয়া থেকে দৈনিক ১২ লাখ ব্যারেল আমদানি করেছে, যা নভেম্বরের চেয়ে ২৯ শতাংশের বেশি।
মাসখানেক আগে ইরাক ও সৌদি আরবকে হটিয়ে ভারতের বৃহত্তম জ্বালানি তেলের উৎস হয়ে ওঠে রাশিয়া। বর্তমানে ভারতের মোট আমদানি করা তেলের প্রায় ৩০ শতাংশই আসছে রাশিয়া থেকে। দিনে দিনে এর পরিমাণ আরো বাড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এআরএস