জ্বালানি তেল উত্তোলন অর্ধেক কমানোর ঘোষণা দিল রাশিয়া

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩, ০৪:১৮ পিএম
জ্বালানি তেল উত্তোলন অর্ধেক কমানোর ঘোষণা দিল রাশিয়া

বিশ্বের শীর্ষ জ্বালানি তেল উত্তোলক ও সরবরাহকারী দেশ রাশিয়া। ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি দেশটির ওপর যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) পশ্চিমা মিত্ররা নিষেধাজ্ঞার নীতি গ্রহণ করে। 

সর্বশেষ রাশিয়া থেকে ডিজেল ও পেট্রলসহ পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধ ঘোষণা করে ইইউ।পাশাপাশি এসব পণ্যের ওপর প্রাইস ক্যাপ দেয়া হয়েছে, যাতে অংশ নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও জি৭। 

এমন প্রেক্ষাপটে আগামী পহেলা মার্চ থেকে দৈনিক তেল উত্তোলন পাঁচ লাখ ব্যারেল কমিয়ে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে মস্কো। শুক্রবার দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক এ তথ্য জানান। 

এদিকে  জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের বরাতে রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, রাশিয়া তেল উত্তোলন কমিয়ে আনলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দামে আবারো অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। পশ্চিমা বিশ্বের এমন নীতিকে বৈশ্বিক জ্বালানি খাতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখছেন তারা।

শুক্রবার রাশিয়ান সংবাদ সংস্থাকে রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেক্সন্ডার নোভাক বলেন, এখন আমরা যে তেল উত্তোলন করছি তার সবই বিক্রি করছি। তবে যারা রাশিয়ার তেলের দাম বেঁধে দেয়ার সঙ্গে আছে তাদের কাছে আমরা তেল বিক্রি করব না। এছাড়া আমরা দৈনিক তেল উত্তোলন পাঁচ লাখ ব্যারেল কমিয়ে দেব।

রাশিয়ার তেলের ওপর ‘প্রাইস ক্যাপ’ দেয়ার সিদ্ধান্তকে বাজারের জন্য ধ্বংসাত্মক উল্লেখ করে নোভাক বলেন, রাশিয়ার তেলের দাম নির্ধারণ আন্তর্জাতিক বাজারে সরাসরি হস্তক্ষেপ বলেই মনে করে মস্কো। এটি একটি ধ্বংসাত্মক জ্বালানি নীতি।

এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পরও গত বছর রাশিয়ার তেল উত্তোলন বেড়েছে। কারণ দেশটির তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হয়ে উঠেছে ভারত ও চীন। গত বছর ৫৩৫ মিলিয়ন টন তেল উত্তোলন করে রাশিয়া। দিনে প্রায় ১০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উত্তোলন করে দেশটি। রুশ প্রধানমন্ত্রীর নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, তেল উত্তোলন প্রায় অর্ধেক করে ফেলবে রাশিয়া।

এরই মধ্যে চলতি বছর রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইউরোপিয় ইউনিয়ন। এতে জোটের কোনো দেশ রাশিয়া থেকে তেল কিনতে পারবে না। অন্যদিকে জি৭ রাশিয়ার তেলের মূল্য প্রতি ব্যারেলে ৬০ ডলার বেঁধে দেয়। প্রসঙ্গত, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বাজেটের বড় অংশই আসে তেল রপ্তানি খাত থেকে।

এছাড়া নতুন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউরোপে শিগগিরই তেলের দাম বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেননা জোটের ২৭টি দেশ রাশিয়ার পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য ও ভারত থেকে ডিজেলের নতুন সরবরাহ পাবে। নতুন এ উৎসগুলো রাশিয়ার তুলনায় দূরবর্তী অঞ্চলের। এতে সরবরাহ খরচ বাড়বে।

রোমভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিইআরের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর এসব বিধিনিষেধ জ্বালানি তেলের বাজারকে আরো বেশি অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেবে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে।

এআরএস