পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী

জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামবে

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৩, ০৯:৫০ পিএম
জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামবে

আন্তর্জাতিক অস্থিরতায় মূল্যস্ফীতির যে চাপ গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশ দেখছে তা ধীরে ধীরে কমে আগামী জানুয়ারিতে ৮ শতাংশে নেমে আসবে বলে মনে করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ও কৃষি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক শামসুল আলম।

চাপে থাকা অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বিনিময় হারকে বাজারমূখী করে আগামী মুদ্রানীতির কৌশলগুলো নির্ধারণ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরামর্শ নিতে অংশীজন হিসেবে বিভিন্ন ধারার অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এসব বৈঠকে নিয়মিত উপস্থিত থাকছেন অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান ও ডেপুটি গভর্নররা।

সেই নিয়মিত সংলাপের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার বিকেলে অর্থনীতিবিদ হিসেবে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈঠক করেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারসহ মুদ্রানীতি তৈরির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা।

বৈঠকে রিজার্ভ বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া পদক্ষেপ, বিনিময় হারকে স্থিতিশীল পর্যায়ে আনা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপগুলো কি তা জানতে চেয়েছেন অধ্যাপক শামছুল আলম।
সরকার চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য ধরেছিল, কিন্তু অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে প্রায় ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ব্যক্তি জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলা মূল্যস্ফীতি সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে হয় ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ; যা গতবছর সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ ছিল।

তার আগের মাস অগাস্টে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল, যা বহু বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই হার গত মার্চ থেকেই ৯ শতাংশের উপরে থাকছে।

বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংক যে নীতি নিয়েছে তা রিভিউ করেছি। আমাদের মতামত চেয়েছে- আমরা দিয়েছি।’’

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক উদগ্রীব জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন,‘‘ আমাদের যে চাপ রয়েছে তা কমে আসবে। যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েই বাংলাদেশ ব্যাংক এগোচ্ছে মনে করছি আমরা।’’

তিনি বলেন, ‘‘যে পদক্ষেপ নেয়া হচেছ তাতে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। ধীরে ধীরে তা কমে আগামী জানুয়ারি মাসে তা ৮ শতাংশে নেমে আসবে মনে করছি।’’

চাপে থাকা রিজার্ভ প্রতিনিয়ত ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। গত বছরের ১ নভেম্বর যেখানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার।

গত ১ নভেম্বরে তা কমে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস হিসাবে হয় ২৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। আর আইএমএফ এর বিপিএম৬ অনুযায়ী গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।
ক্ষয় হতে থাকা রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন কিছু পদক্ষেপ নিতে চাওয়ার কথা জানিয়েছে প্রতিমন্ত্রীকে। 

সে বিষয়ে শামসুল আলম বলেন, ‘‘আমরা আশা করছি অর্থনীতিতে যে চাপ রয়েছ তা স্থিতিশীল হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় অত্যন্ত মনোযোগী হয়েছে। তা বাড়াতে কিছু পদক্ষে নিতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। আমরাও সুনির্দিষ্ট পরামর্শ তো অবশ্যই দিয়েছি বাড়ানোর জন্য।’’

তিনি বলেন, ‘‘বিনিময় হার বাজারমূখী করা প্রয়োজন। আমরা বলেছি তা করতে। সবই তো বাজারমূখী করতে হবে। আশা করছি ধীরে ধীরে চাপ কমে গিয়ে বিনিময় হারও স্থিতিশীল হবে।’

বৈঠকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান জানান, ‘‘অর্থনীতিবিদ হিসেবে তার পরামর্শগুলো আমরা নিয়েছি। আমাদের পদক্ষেপগুলো জানিয়েছি। তিনি আমাদের পদক্ষেপের সঙ্গে একমত হয়েছেন।’’

‘‘নীতি পদক্ষেপগুলোর অনেকগুলোই বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রভাব দেখতে তো একটু সময় লাগবে। এক পর্যায়ে আশা করছি ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হয়ে আসবে।‍‍`

অর্থনীতি চাপে পড়ার পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা, বিনিময় হার বাজারমূখী করা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার মতো চ্যালেঞ্জগুলো ঘুরে ফিরেই উঠে আসছে অর্থনীতির সব আলোচনায়। 

এসব ব্যবস্থাপনা করতে গিয়ে এক ধরনের চাপের মূখেও আছে বাংলাদেশ ব্যাংক।  প্রথম দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক তা অস্বীকার করলেও আন্তর্জাতিক ‍মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ এর সঙ্গে ঋণ চুক্তিতে যাওয়ার পর অর্থনীতির চিরাচরিত তত্বে ফিরে আসতে শুরু করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৈশ্বিক সংস্থার পর এবার দেশিয় অর্থনীতিবিদদের সঙ্গেও বৈঠক করছে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো উত্তোরণে। ইতোমধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার বাড়িয়ে আগামী মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক করার ঘোষণাও দিয়েছে।

ব্যাংকিং খাত থেকে টাকা ছাপিয়ে সরকারি ঋণ নেয়ার পরিমাণ একেবারেই কমিয়ে এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ানো ও হুন্ডি প্রবণতা কমিয়ে আনতে টাকার বিনিময় হার বাজারমূখী করতে বাফেদা ও এবিবির হাতে ছেড়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বছরের সেপ্টম্বরে।

বাফেদা–এবিবি’র উপর ছেড়ে দেয়ার পর ৯৫ টাকা ডলারের দর এখন ১১১ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। আর খোলা বাজারে তা ১২০ টাকায় উঠেছে।

রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে প্রবাসীদের পাঠানো আয়ের উপর সরকার আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনাও দিচেছ। আর ইচ্ছেমতো প্রণোদনা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে ব্যাংকগুলোর।

আরএস