ঋণ খেলাপি মুন গ্রুপের দায়ের করা মামলায় অগ্রণী ব্যাংকের এমডির সাজা

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২৪, ০৯:৩৯ এএম
ঋণ খেলাপি মুন গ্রুপের দায়ের করা মামলায় অগ্রণী ব্যাংকের এমডির সাজা
ছবি: সংগ্রহীত

খেলাপি গ্রাহক মুন গ্রুপের দায়ের করা মামলায় অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মুরশেদুল কবীরসহ ৫ শীর্ষ কর্মকর্তাকে সাজা দিয়েছে হাইকোর্ট।  তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ গত মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) এ রায় দিয়েছেন।

জানা গেছে, নির্ধারিত সময়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করায় খেলাপি হয়ে পড়ে মুন গ্রুপ। টাকা পরিশোধ না করে উল্টো ব্যাংকের বিরুদ্ধে  মামলা করে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করে গ্রুপটি। এক্ষেত্রে আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে আদালতকে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাই মুন গ্রুপকে খেলাপি তালিকাভুক্ত করে সিআইবি রিপোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়। এর ফলে অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারছিল না গ্রুপটি।

ক্ষুব্ধ হয়ে অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করে খেলাপি গ্রাহক মুন গ্রুপ।  এর প্রেক্ষিতে ব্যাংকটির এমডি মো. মুরশেদুল কবীরসহ  পাঁচ শীর্ষ কর্মকর্তাকে ৩ মাসের দেওয়ানি বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া রায় পাওয়ার চার সপ্তাহের মধ্যে তাদের ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। অন্য চার কর্মকর্তা হলেন, অগ্রণী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখার জেনারেল ম্যানেজার মো. ফজলুল করিম, এলপিআরে যাওয়া আরেক জেনারেল ম্যানেজার এ কে এম ফজলুল হক, অগ্রণী ব্যাংকে ডেপুটি ম্যানেজার-২ শ্যামল কৃষ্ঞ সাহা, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর-১ ওয়াহিদা বেগম।

ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ঋণ খেলাপিরা আদালতকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। ঋণ পরিশোধ না করে আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে বেড়িয়ে যেতে চায় তারা। ফলে অর্থ খরচ করেও বিনিয়োগকৃত ঋণ ফেরত আনতে পারে না ব্যাংক। এতে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের তালিকা দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে। খেলাপিদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের স্থিতাবস্থার কারণে বিপুল পরিমাণ ঋণ আটকা রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে ঋণ ফেরত না পাওয়ায় ব্যাংক খাতে তীব্র তারল্য সংকট দেখা দিচ্ছে।

মুন গ্রুপের পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নুরুল আমীন বুধবার রায়ের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আদালত অবমাননার কারণে অগ্রণী ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের হাইকোর্ট ৩ মাসের দেওয়ানি বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। একইসঙ্গে তাদের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন। বিস্তারিত তথ্য পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে জানা যাবে।

এদিকে হাইকোর্টের এই দেওয়ানি সাজার রায়ের বিরুদ্ধে বুধবার আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তাদের আইনজীবী শামীম খালেদ। আজ (বৃহস্পতিবার) আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে এই আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।

আইনজীবীরা জানান, ২০১৭ সাল পর্যন্ত মুন গ্রুপের কাছে অগ্রণী ব্যাংকের ডিগ্রি মূলে পাওনা ৫৩৯ কোটি টাকা। ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান শাখা থেকে পাওনার ২৫ শতাংশ কিস্তিতে পরিশোধের জন্য মুন গ্রুপের কাছে চিঠি দেওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঋণের ২৫ শতাংশ পরিশোধ না করলে মুন গ্রুপকে খেলাপি তালিকাভুক্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবিতে পাঠানো হবে। এই ব্যাংকের চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নিম্ন আদালতে ঘোষণামূলে ডিগ্রি প্রার্থনা করা হয়। একইসঙ্গে ব্যাংকের চিঠির বিরুদ্ধে আদেশ প্রার্থনা করে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়। নিম্ন আদালত এই আদেশ নামঞ্জুর করেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে মুন গ্রুপ হাইকোর্টে বিবিধ আপিল দায়ের করেন। হাইকোর্ট ২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর ব্যাংকের চিঠির ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন। পাশাপাশি রুল দেন।

এদিকে নির্ধারিত সময়ে ঋণের ২৫ শতাংশ কিস্তি পরিশোধ না করায় মুন গ্রুপকে খেলাপি তালিকাভুক্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি পাঠায় অগ্রণী ব্যাংক। পরে মুন গ্রুপ অগ্রণী ব্যাংকের এমডিসহ চার নির্বাহীর বিরুদ্ধে ভায়োলেশন মোকাদ্দমা দায়ের করে। মামলার শুনানি শেষে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি, ডিএমডিসহ চার নির্বাহী ৩ মাসের দেওয়ানি কারাদণ্ড দিয়েছেন। এদের মধ্যে একজন এলপিআরে যাওয়া নির্বাহী কর্মকর্তা রয়েছেন।

অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তারা আমার সংবাদকে জানিয়েছেন, আদালত অবমাননার সাথে বর্তমান এমডি মো. মুরশেদুল কবীরের সংশ্লিষ্টতা নেই। কারণ ঘটনার সময় তিনি অগ্রণী ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন না। আজ বৃহস্পতিবার বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরে আনা হবে বলে জানিয়েছে অগ্রণী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র।

নাম প্রকাশ না করে অগ্রণী ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, যে গ্রুপটি জনগণের টাকা আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছে তার পক্ষে রায় দেওয়ায় ব্যাংকারদের মনোবল ভেঙে যেতে পারে। খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার কারণে যেখানে প্রশংসা পাওয়ার কথা; উল্টো শাস্তি পেতে হচ্ছে। উচ্চ আদালতের বিষয়গুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।

এআরএস