নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি নিরাপত্তা ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির পূর্বশর্ত: ঢাকা চেম্বার সভাপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪, ০৭:৩৩ পিএম
নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি নিরাপত্তা ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির পূর্বশর্ত: ঢাকা চেম্বার সভাপতি
ছবি: আমার সংবাদ

বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ট্রিলিয়ন ডলারের স্মার্ট অর্থনীতিতে পরিণত করতে হলে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যবসায় টেকসই নীতি সংস্কার করতে হবে। ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাস ও পরিচালনা সূচকে উন্নয়ন, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও লজিস্টিক খাতের উন্নয়ন এবং সর্বোপরি বেসরকারিখাতে ঋণ প্রাপ্তির সহজলভ্যতা একান্ত অপরিহার্য বলে মনে করেন ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ।

রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বেসরকারিখাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক পর্যালোচনা (জুুলাই-ডিসেম্বর, অর্থবছর ২০২৪)’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে যোগদান করেন।

ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ সেমিনারে ২০২৪ অর্থবছরের জুুলাই-ডিসেম্বর সময়কালে অর্থনীতির সার্বিক প্রেক্ষাপটের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

মূল প্রবন্ধে তিনি স্থানীয় অর্থনীতিতে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাব, এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ, জাতীয় বাজেট ও মুদ্রানীতির বাস্তবায়ন অবস্থা, মুদ্রাস্ফীতি, বেসরকারি বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, কৃষি, দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান, সিএমএসএমই, তথ্যপ্রযুক্তি এবং সেবা খাত নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন।

তিনি বলেন, জিডিপিতে বেসরকারিখাতের বিনিয়োগের অবদান কমে যাওয়াটা উদ্বেগের বিষয় পাশাপাশি স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাস, সহনীয় মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি প্রাপ্তি, লজিস্টিক খাতের উন্নয়ন জরুরি। এছাড়াও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এর ফলে বেসরকারিখাতে ঋণপ্রবাহ হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে, তাই বিষয়গুলোর মধ্যকার সমন্বয় আবশ্যক।

এলডিসি পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীরণ এবং বাজার সম্প্রসারণে আমাদের কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে বলে ডিসিসিআই সভাপতি মত প্রকাশ করেন। এছাড়াও তিনি উৎপাদিত কৃষি পণ্যের সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ সুবিধা দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের সম্প্রসারণের উপর জোরারোপ করেন।

সম্প্রতি তৈরি পোশাক খাতে প্রণোদনা সুবিধা প্রত্যাহারের বিষয়ে ঢাকা চেম্বার সভাপতি বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত আগ থেকেই বেসরকারিখাতকে অবহিত করলে, বেসরকারিখাত সে অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে সক্ষমত হবে। পাশাপাশি চামড়া খাতে দ্রুততম সময়ের ইটিপি স্থাপন কার্যক্রম সম্পন্ন, এপিআই পার্কে সকল সেবা নিশ্চিতের মাধ্যমে চালুকরণ, সিএমএসএমই খাতে অর্থায়ন ও প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষমতা বাড়ানো এবং খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি বিষয়ের উপর বিস্তারিত আলোকপাত করেন।     
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মসিউর রহমান বলেন, গত কয়েক দশকে আমাদের অর্থনীতির মৌলিক পরিবর্তন এসেছে। তার মধ্যে বেসরকারিখাতের সম্প্রসারণ অন্যতম।

বাংলাদেশ ব্যাংক’র প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)-এর রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মোহাম্মদ ইউনুস, ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি শামস মাহমুদ এবং পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট (পিআরআই)-এর সিনিয়র ইকোনোমিস্ট ড. আশিকুর রহমান সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক’র প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হওয়ায় স্থানীয় বাজারে পণ্য মূল্য বেড়েছে এবং বিদ্যমান অবস্থা মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

তিনি জানান, আমদানি-রপ্তানি ও রেমিট্যান্স মিলিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি হিসাব দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেশি।

তিনি জানান, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে সমন্বয় আনায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, ফলে এক্ষেত্রে স্বস্তি আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। মূল্যস্ফীতি না কমা পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমুখী নীতি অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী ২ বছরের মধ্যে শিল্পখাতে খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশ নিচে নামিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি রড ম্যাপ গ্রহণ করেছে।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)’র রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, কর ব্যবস্থাপনা ও কর আদায় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনায়ন অপরিহার্য।

তিনি বলেন, শিল্পখাতের প্রয়োজনের নিরিখে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে আমাদের শিক্ষাখাতের সংস্কার ও বিশেষকরে কারিগরি শিক্ষার উপর আরো অধিক হারে গুরুত্ব দিতে হবে।

ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, জ্বালানি উচ্চ মূল্য প্রদান করলেও শিল্পখাতের আমরা চাহিদামতো নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ পাচ্ছি না, ফলে পণ্য উৎপাদন সংকুচিত হচ্ছে, এমতাবস্থায় নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি দিতে না পারলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ সম্প্রসারিত হবে না।

পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট (পিআরআই)’র সিনিয়র ইকোনোমিস্ট ড. আশিকুর রহমান বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তবে সেখানে সময়মতো পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেই। অর্থনৈতিক আকাঙ্ক্ষা পূরণে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ইনোভেশনের উপর অধিক হারে মনোনিবেশ করার উপর তিনি আহ্বান জানান।

ঢাকা চেম্বারে ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারি, সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলী, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ সহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এআরএস