হু হু করে বাড়ছে মসলার দাম

মিরাজ উদ্দিন ও আব্দুল হামিদ, ঢাকা প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৪, ০৮:০৪ পিএম
হু হু করে বাড়ছে মসলার দাম
  • সাত দিনে এলাচ বেড়েছে ৩-৪শ টাকা
  • সাদা কালো গোল মরিচ বেড়েছে ১৫০ টাকা বেশি
  • বেড়েছে, আলু, মরিচ, পেঁয়াজের দাম 
  • এখনই বাজার মনিটরিং প্রয়োজন

কোরবানি ঈদের এখনো দুই সপ্তাহের বেশি বাকি থাকলেও বাড়তি চাহিদাকে কেন্দ্র করে বেড়েছে প্রায় সব ধরনের মসলার দাম। এতে বিপাকে পড়েছেন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। দোকানিরা দাম বাড়ার বিষয়ে দোষারোপ করছন ডলারের মূল্য বৃদ্ধির উপর।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি ও বিভিন্ন খুচরা দোকান ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।

সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে এলাচের। এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এলাচের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশের বেশি। অন্যান্য মসলার মধ্যে জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মসলা পট্টিতে কথা হয় ক্রেতা রফিকের সঙ্গে। তিনি আমার সংবাদকে বলেন, ঈদকে সামনে রেখে মসলার বাজার এখন অস্থির। ঈদের আগে যদি বাজার মনিটরিং না করে তাহলে বাজার আরও অস্থিরতা বাড়বে। দুই মাস আগেও আমি এলাচ কিনেছি ১৯০০ টাকা কেজি। সেটি এখন ৩২০০ টাকা কীভাবে হয়? দুই মাসে কি ডলারের দাম এত বেড়েছে? হয়ত শেষ সময়ে মসলার দাম আরও বাড়তে পারে সে জন্য নিরুপায় হয়ে কিনতে হচ্ছে।

কথা হয় আরেক ক্রেতা মাহতাবের সঙ্গে তিনি বলেন, এক কেজি জিরা কিনতাম ৪০০ টাকা দিয়ে এখন সে জিরার দাম ৮০০ টাকা প্রায়। এলাচের দাম এখন অর্ধেকের চেয়েও বেশি। আগে ১০০ টাকার এলাচ নিলে ১ মাস পার হতো। এখন ১ সপ্তাহও যায় না। মসলার বাজার এখন সিন্ডিকেটের হাতে। খুচরা বিক্রেতাদের হাতে এখন আর কিছুই নেই। দোকানেরা অল্প কিছু মুনাফাতে বিক্রি করছে। কিন্তু মূল সিন্ডিকেট উপরে আছেন। সিন্ডিকেট ভাঙতে পারলে এসব থেকে রক্ষা পাওয়া যেতো।

কারওয়ান বাজারের মসলা বিক্রেতা সামির আহমেদ বলেন, প্রতিবছর কোরবানির ঈদ আসলেই পাইকাররা মসলার দাম বাড়িয়ে দেন। আবার ঈদের পর মসলার দাম আগের জায়গায় চলে যায়। আমরা যখন যে দামে কিনি সে দামেই বিক্রি করি। কয়েক মাস আগেও এলাচ ১৯০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতাম। এখন সেটা ৩২০০-৪০০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।

ঈদের আগে আরও দাম বাড়বে কী না জানতে চাইলে বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের এখনো ২ সপ্তাহের বেশি আছে বলা যাচ্ছে না এই সময়ে মসলার দাম আরও বাড়বে কী না।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন জামিল হাসান মসলা কিনতে এসে হিমশিমে পড়ে যান তিনি। নিজের চাহিদা অনুযায়ী নিতে চান, কিন্তু দোকানদার অল্প পরিমাণ বিক্রি করবেন না, তাই তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কম টাকায় হলে তো বেশি করে নিতাম, এখন আমার যে পরিমাণ টাকা সে অনুযায়ী তো টাকা শর্ট।

আমার সংবাদকে তিনি বলেন, ঈদের বাকি এখনো অনেক দিন কিন্তু দাম যে বাড়তে শুরু করছে সেই ভয়ে আগে কেনার জন্য আসলাম। এসে দেখি যা অবস্থা আমাদের হাতের নাগালের বাইরে।

এদিকে এলাচ এখন মানভেদে প্রতি কেজি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগেও দাম ছিল ২ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা।

পাইকারিতে প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার টাকায়। এক মাস আগে ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়।

কেজিতে ১০০-২০০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি গোল মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ ও সাদা গোলা মরিচ ১ হাজার ১০০ টাকায়। জিরা এক মাসে ৫৮০-৬২০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন প্রতি কেজি ৭৫০-৯২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধনিয়ার কেজি এখন ২০০ থেকে ২৪০ টাকা আর তেজপাতা ১৫০-২০০ টাকা।

ঈদকে সামনে রেখে আরও দাম বাড়তে পারে কী না এমন প্রশ্নে দোকানিরা বলেন, বাড়ার সম্ভবনা আছে, কিন্তু কমবে কিনা তা বলা যায় না। তবে ডলারের দাম যদি একটু কমে তাহলে মসলার দামও কমবে। কারণ এই মসলাগুলো বাহিরের দেশ থেকে ইনপোর্ট করা হয়। তবে গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কাস্টমারও অনেক কম। এখনো বেচাকেনা ভাল করে শুরু করতে পারি নাই।

রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গেল এক বছরে গড়ে প্রতি কেজি মসলার দাম বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। সবচেয়ে কম ১১ শতাংশ দাম বেড়েছে দারুচিনির। লবঙ্গে ১৭, ধনিয়ায় ৫২, তেজপাতায় ৫২ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ৬১ শতাংশ বেড়েছে এলাচে।

গত বছর প্রতি কেজি এলাচ ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। ওই সময় লবঙ্গের দাম ছিল ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।

সাধারণ মানুষের অভিযোগ বাজারে সরকারের কোন তদারকি নেই। ফলে ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছামতো দাম বৃদ্ধি করে বিক্রি করেছে। বাজারে একটু তদারকি করলেই অনেকটা হাতের নাগালে চলে আসবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম।

মিরাজ/হামিদ/ইএইচ