ইসলামী ব্যাংকগুলোতে আমানত ও রপ্তানি আয়ে ধস

আনোয়ার হোসাইন সোহেল প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২৪, ১২:০৭ এএম
ইসলামী ব্যাংকগুলোতে আমানত ও রপ্তানি আয়ে ধস

অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, পরিচালকদের স্বেচ্ছাচারিতা আর জবাবদিহিতার অভাবে আস্থার সংকটে পড়েছে দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলো। যার প্রভাবে ইসলামি ব্যাংকগুলোর আমানত ও রপ্তানি আয়ে কমেছে ৩৯০০ কোটি টাকা।

রপ্তানি আয় কমেছে ৪৯০০ কোটি টাকা

এক সময় দেশের ব্যাংক খাতের মধ্যে মানুষের সবচেয়ে বেশি আগ্রহের জায়গা ছিল শরীয়াহ ভিত্তিক পরিচালিত ইসলামি ব্যাংকগুলো। সুদমুক্ত লেনদেন হওয়ায় দিন দিন ইসলামি ব্যাংকগুলোর প্রতি মানুষের আগ্রহও বাড়তে থাকে। তারপর ইসলামি ব্যাংকগুলোর ব্যবসা দেখে কিছু প্রচলিত ধারার ব্যাংকও তাদের পলিসি পরিবর্তন করে ইসলামি শরীয়াহ ভিত্তিক পরিচালনা শুরু করে। কিন্তু একটি গ্রুপের হাতে প্রায় অর্ধডজন ইসলামি ব্যাংক চলে যাওয়া ও তাদের ইচ্ছে মত ব্যাংক পরিচালনা করায় সুনাম ক্ষুণ্ন হতে থাকে ইসলামী ব্যাংকগুলোর। ঋণ জালিয়াতিসহ নানা অনিয়মের কারণে ইসলামি ব্যাংকগুলো দুর্নামের সাথে দুর্বলও হয়ে পড়ে। ইসলামি ব্যাংকগুলোর উপর মানুষের আস্থা নষ্ট হতে থাকে। ভয়ে-আতঙ্কে গ্রাহকরা তাদের জমাকৃত টাকা তুলতে থাকে। ফলে ব্যাংকগুলোতে দেখা দেয় তারল্য সংকট। এমনকি চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকেও দেশের ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোতে আমানত কমেছে ৪ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া, এ সময়ে ব্যাংকগুলোর আমানত কমলেও বেড়েছে ঋণ বিতরণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২৩ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে দেশের পূর্ণাঙ্গ ১০টি ইসলামি ব্যাংক, কয়েকটি প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ইসলামিক শাখা ও উইন্ডোগুলোর আমানতের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আর চলতি ২০২৪ সালের মার্চ শেষে ইসলামি ব্যাংক, প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ইসলামি শাখা ও উইন্ডোগুলোর আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে ইসলামি ব্যাংকগুলোর আমানত কমেছে ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিকে আমানত কমছে আর অপরদিকে ঋণ বিতরণ বাড়ছে-এটা প্রমাণ করে ইসলামি ব্যাংকগুলোর অবস্থা ভালো না। তাদের আয় হচ্ছে কম আবার ব্যয় করছে বেশি। ব্যাংকগুলোতে সব সমস্যার মূলে হল সুশাসন। সুশাসনের অভাবে ইসলামি ব্যাংকগুলোতে এসব সমস্যা দেখা দিয়েছে। এক সময় ব্যাংকগুলোর অবস্থা এমন ছিল না। এখানে করপোরেট গভর্নেন্স প্রশ্নবিদ্ধ। আমানত কমা মানে এখানে মানুষের আস্থার অভাব আছে। তা না হলে মানুষ ইসলামি ব্যাংকগুলো থেকে আমানত তুলে নিবে কেন? অনিয়ম-জালিয়াতি বন্ধ করে মানুষের আস্থা ফেরাতে না পারলে ব্যাংকগুলো দিন দিন আরও ঝুঁকিতে পড়বে।

অপরদিকে ইসলামি ব্যাংকগুলো ডিসেম্বর প্রান্তিকের চেয়ে মার্চ প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ বেশি করছে ১২০০০ হাজার কোটি টাকা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ইসলামি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের স্থিতি ছিল ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। আর তিন মাস পর (জানুয়ারি-মার্চ) ইসলামি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৯০০ কোটি। সেই হিসাবে মার্চ প্রান্তি অর্থাৎ তিন মাসে  ইসলামি ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ বেশি হয়েছে ১২০০০ কোটি টাকা।

আর ঋণ বিতরণ বেশি হওয়ায় মার্চ প্রান্তিকে ইসলামি ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্যও কমেছে। ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে ইসলামি ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য ছিল ১১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। আর মার্চ প্রান্তিক শেষে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে ইসলামি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রপ্তানি আয় এসেছিল ৩৭ হাজার কোটি টাকা। আর পরের মার্চ প্রান্তিকে রপ্তানি আয় এসেছে ৩২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ডিসেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় মার্চ প্রান্তিকে রপ্তানি আয় কম এসেছে ৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে শরীয়াহ ভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আর পরের প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ইসলামি ব্যাংকগুলো মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ২৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে মার্চ প্রান্তিকে ইসলামি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী আয় বেশি এসেছে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

সোহেল/ইএইচ