ঈদের আগে সবজি-মাংসসহ পণ্যের দাম চড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২৫, ০৭:৩২ পিএম
ঈদের আগে সবজি-মাংসসহ পণ্যের দাম চড়া

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রমজানের শেষ সপ্তাহে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। বিশেষ করে সবজির দাম আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে, পাশাপাশি মাংসের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে।

শুক্রবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। বেশির ভাগ সবজিতে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৪০ টাকা। শান্তিনগর কাঁচাবাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ অনেকটাই কমে এসেছে। শীত-গ্রীষ্মের মাঝামাঝি মৌসুম হওয়ায় সবজির দাম বেড়েছে বলে দাবি করছেন বিক্রেতারা।

সবজি বিক্রেতা আরিফ জানান, “এখন বাজারে না শীতের সবজি আসছে, না গরমের সবজির মৌসুম শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে মধ্যবর্তী এমন অবস্থায় সবসময়ই সবজির দাম বেশি থাকে। মৌসুমি সবজি উঠতে শুরু করলে দাম আবার কমে আসবে।”

মালিবাগ কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়, বরবটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, শিম ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কচুর লতি ৭০ থেকে ৯০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ থেকে ৮০ টাকা এবং সজনে ডাটা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়।

ঈদের আগে ছুটির দিনে সবজি কিনতে এসে হতাশ ক্রেতারা জানাচ্ছেন, রমজানের মাঝামাঝি সময় সবজির দাম অনেকটাই কমে আসলেও শেষের দিকে রীতিমতো আগুনে দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি।

মালিবাগ কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা ইফাজ বলেন, “প্রায় প্রতিটি সবজির কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। পেঁপে আর ঢেঁড়শ বাদে প্রতিটি সবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। ঈদের বাজারে সরবরাহ কমে আসবে, তাই আগে থেকে সবজি কিনতে এসে দেখি বাজারের বেহাল দশা।”

তবে কমেছে লেবুর দাম। রোজার শুরুতে লেবুর দাম ১২০ থেকে ১৫০ টাকা হালি হলেও শেষ সপ্তাহে তা উল্লেখযোগ্য কমে বিক্রি হচ্ছে। সিলেটের এলাচ লেবু হালি প্রতি ২০ টাকা, কাগজি এবং বাতাবি লেবু হালি প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে, বেগুনের দাম শুরু থেকে এখনও উচ্চ। জাতভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শসা ও টমেটোর দাম আগের মতোই রয়েছে। টমেটোর দাম কেজিপ্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি।

ধনেপাতার কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা হলেও দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচের। খুচরা বাজারগুলোতে কেজিপ্রতি কাঁচা মরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এছাড়া লাউ প্রতি পিস ৬০ থেকে ৮০ টাকা এবং চালকুমড়া ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এতকিছুর মধ্যে আলুর দাম কমেছে। পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ২০ টাকায় এবং খুচরা পর্যায়ে তার দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা। আলুর দাম কম হলেও কেজিতে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, তবে পাইকারিতে প্রতি পাল্লা (১ পাল্লা ৫ কেজি) পেঁয়াজ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা বাজারে ভারতীয় রসুন ২২০ থেকে ২৪০ টাকা এবং দেশি রসুন ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। আদার দাম প্রায় আগের মতোই রয়েছে। জাতভেদে প্রতি কেজি আদা ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাংসের দাম বৃদ্ধি

ঈদের আগে বেশিরভাগ দোকানে মুরগির মাংসের দাম বেড়েছে। উত্তর ও মধ্য বাড্ডার কাঁচাবাজারে দেখা যায়, কেজিতে ব্রয়লার মুরগির দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগির দামও বেড়েছে, বর্তমানে সোনালি মুরগি কেজি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতারা জানান, মুরগি সরবরাহ বা পরিবহন ব্যবস্থায় কোনো সংকট নেই, তবে ঈদের আগে বাজারে বাড়তি খরচের কারণে দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। মুরগি বিক্রেতা সবুজ বলেন, “ঈদের এই কয়দিন মুরগির দাম একটু বাড়তি থাকবে। এখন যাকে দিয়েই কাজ করাবেন তাকেই ঈদের বকশিস দিতে হবে। সব মিলিয়ে লোকসান এড়াতে মুরগির দাম কিছুটা বাড়াতে হয়েছে।”

মাছের বাজারে চড়া দাম

মাছের বাজারে প্রায় প্রতিটি মাছের দাম বেড়েছে, বিশেষ করে ইলিশ মাছের দাম। শান্তিনগর কাঁচাবাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ২,৮০০ থেকে ৩,০০০ টাকা। এক কেজির ওপরে ওজন হলে কেজিপ্রতি দাম ৩,৫০০ টাকা। ছোট সাইজের ইলিশও ১,৬০০ থেকে ১,৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

মাছ বিক্রেতারা জানান, “ইলিশের সরবরাহ একেবারেই কম, তবে ঈদের আগে চাহিদা বেড়েছে।” অন্যান্য মাছের দামও বেড়েছে, যেমন গলদা চিংড়ি, রুই, কাতল, পোয়া, শিং, মাগুর এবং তেলাপিয়া।

ইএইচ