কক্সবাজারের সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের সংগঠন সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনের বিরুদ্ধে দেয়া কক্সবাজার সিনিয়র সহকারি জজ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে মিচ আপিলে ‘মামলাটি অচল’ বলে দেয়া জেলা ও দায়রা জজ মুন্সি আবদুল মজিদের রায় ও ডিগ্রীর উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাই কোর্টের অবকাশকালিন বেঞ্চ।
অবকাশকালিন বেঞ্চের বিচারক বিচারপতি আতাব উল্লাহর আদালত এই আদেশ দেন। ওই আদেশে আপিল নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার-জেইউসি’র ২০২৫-২০২৬ সেশনের নির্বাচনি কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়।
সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের ভোটাধিকার বঞ্চিত ১০ জন সদস্যের রিট আবেদনের শুনানি শেষে এই আদেশ দেয়া হয়।
উচ্চ আদালতের ওই রায়কে উপেক্ষা করে নির্বাচনি কার্যক্রম পরিচালনা করার চেষ্টা করায় নির্বাচন পরিচালনা কমিটিকে ‘আদালত অবমাননা’র নোটিশও দেয়া হয়েছে। ওই নোটিশের পরও নির্বাচনী কার্যক্রম এখনও চালু রয়েছে।
রিটকারিদের আইনজীবী ব্যারিষ্টার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গত ২৫ মার্চ হাই কোর্টের অবকাশকালিন বেঞ্চের বিচারক বিচারপতি আতাব উল্লাহর আদালত আপিল নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন। এই আদেশের ফলে সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার এর যে কোন ধরণের নির্বাচনী কার্যক্রম চালানো আইনত নিষিদ্ধ। এর ব্যত্যয় হলে তা হবে আদালত অবমাননার শামিল।
ইতোপূর্বে গত ১৬ মার্চ কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মুন্সি আবদুল মজিদ জেইউসি’র সদস্য নাছির উদ্দিন নোমানসহ ১০ জন সদস্যের ভোটাধিকার চেয়ে কক্সবাজার সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে দায়ের করা মামলাটি খারিজ করে দেন। এই রায়ে সংক্ষুব্দ হয়ে সাংবাদিক ইউনিয়নের ওই ১০ সদস্য হাই কোর্টের অবকাশকালিন বিচারপতি আতাব উল্লাহর একক বেঞ্চে রিট পিটিশন দায়ের করেন। আদালত রিট পিটিশনটি আমলে নিয়ে শুনানি শেষে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজের রায় ও ডিগ্রীর উপর স্থগিতাদেশ দেন।
হাইকোর্টের এই আইনজীবী বলেন, ঈদের ছুটিতে আদালত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রায়ের পূর্ণাঙ্গ সার্টিফায়েড কপি নেয়া সম্ভব হয়নি। তাই সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার এর নির্বাচন পরিচালনা কমিটিকে ‘লইয়ার সার্টিফিকেট’ পাঠিয়ে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
ব্যারিষ্টার বেলায়েত হোসেন বলেন, আমরা জানতে পেরেছি উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের লিখিত লইয়ার সার্টিফিকেট পাওয়ার পরও নির্বাচন পরিচালনা কমিটি নির্বাচনের কার্যক্রম চালু রেখেছেন। বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে নির্বাচনী তফসিল বাতিল করতে তাদের আইনি নোটিশ দেয়া হয়েছে। আইনি নোটিশ পাওয়ার পরও নির্বাচন কর্মকান্ড বন্ধ না করলে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হবে।
রিট পিটিশনটির অন্যতম রিটকারি শামসুল আলম শ্রাবণ বলেন, আমরা আমাদের ভোটাধিকারের জন্য লড়ছি। জেলা জজ আদালতের রায়ে সংক্ষুব্দ হয়ে আমরা উচ্চ আদালতে গিয়েছি। বিজ্ঞ উচ্চ আদালত আমাদের বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। তাই রিট নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার এর নির্বাচনী কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কতিপয় সদস্য ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ হয়ে আদালতের আদেশকে অমান্য করে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করার অপচেষ্টা করছেন।
সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান মুহম্মদ নূরুল ইসলাম জানান, হাই কোর্টের আদেশের লইয়ার সার্টিফিকেট পাওয়ার আগেই নির্বাচনী তফসিলের নোটিশ দেয়া হয়েছে। পরে লইয়ার সার্টিফিকেট পাওয়ার পর নির্বাচনী কমিটির বৈঠকে দুইজন সদস্য এসএম আমিনুল হক চৌধুরী ও মাহবুবর রহমান সার্টিফিকেটের ওই আদেশকে ‘ফেইক’ বলে দাবি করেন। এই ঘটনার পর আমরা কক্সবাজারের তিনজন সিনিয়র আইনজীবীর মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছি। আইনজীবীদের মতামতের জবাব পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, আমরা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আদালতের আদেশ অনুযায়ী আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
এদিকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ‘স্বৈরাচারি’ ও ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ হয়ে জোরপূর্বক নির্বাচনী কার্যক্রম চালানোর অপচেষ্টার প্রতিবাদে বুধবার (০২ এপ্রিল) দুপুরে কক্সবাজারে এক সংবাদ সম্মেলন করেছে ভোটারবঞ্চিত সদস্যরা। তারা নির্বাচন নিয়ে সবধরণের অপচেষ্টা ও অপকর্মের বিবরণ তুলে ধরে আগামি ৬ এপ্রিল কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ও ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। তারা বলেন, আমাদের সদস্য না করে নির্বাচনের ভোটগ্রহণের অপচেষ্টা করলে তা প্রতিহত করা হবে। অবৈধ এই নির্বাচনে যারা ভোট দিতে যাবেন তাদের আমাদের লাশের উপর দিয়ে যেতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কতিপয় সদস্য ও প্রতিদ্বন্ধী একটি প্যানেল দেশের আইন-আদালতকে অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করে নির্বাচনী কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছেন।
এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভোটাধিকারবঞ্চিত সদস্য শামসুল আলম শ্রাবণ, এসকে সেলিম, কামরুল হাসান মিনার, রাশেদুল ইসলাম প্রমূখ।
প্রসঙ্গত, জেলা ও দায়রা জজ আদালত নাছির উদ্দিন নোমানসহ ১০ সদস্যের মামলাটি খারিজ করার পর উচ্চ আদালতে রিট হলেও সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার নির্বাচন পরিচালনা কমিটি তড়িগড়ি করে আগামি ৬ এপ্রিল নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ ঘোষণা করে। এ নিয়ে ভোটাধিকার বঞ্চিত সদস্যরা সংক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন। তারা ধারাবাহিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইএইচ