সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. বুলবুল আহমেদ (২২) ছিনতাইয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুন হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বুধবার দুপুরে জরুরি এক প্রেসব্রিফিংয়ে এমন তথ্য জানান সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. আজবাহার আলী শেখ।
তিনি বলেন, ঘটনার পর গত সোমবার ও মঙ্গলবার তিনজন ছিনতাইকারীকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়। এদের মধ্যে আবুল হোসেন (১৯) নামের একজনের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে আরও দুজনকে আটক করা হয়। তারা হলেন মো. কামরুল আহমদ (২৯) ও মো. হাসান (১৯)। তাদের বাড়ি বিশ^বিদ্যালয়ের লাগোয়া টিলারগাঁও এলাকায়। জিজ্ঞাসাবাদে কামরুলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাঁর ঘরের ভেতর থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতার তিনজন জিজ্ঞাসাবাদে খুনের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে জানিয়ে আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘তদন্তে আমরা জেনেছি, ছিনতাইয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুনের ঘটনা ঘটেছে। শাবির গাজীকালু টিলা এলাকায় সোমবার অবস্থান করছিলেন আবুল হোসেনসহ চারজন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে দুজন চলে যায়। সন্ধ্যার পর বাকি দুজনের সঙ্গে যোগ দেয় কামরুল। গাজীকালু এলাকায় সন্ধ্যার পর ঘুরতে যান শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ ও তাঁর বান্ধবী মার্জিয়া উর্মি। এসময় তাদের কাছে আবুল হাসান, কামরুল আহমদ ও মো. হাসান মোবাইল ও টাকা দাবি করে। একপর্যায়ে বুলবুলের সাথে তাদের ধাক্কাধাক্কি ও ধস্তাধস্তি হয়। তখন তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘উর্মিকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। সে বলেছে, ঘটনার সময় বুলবুলের কাছ থেকে একটু দূরে সরে গিয়েছিল। বুলবুলের মানিব্যাগও খোয়া যায়নি। গ্রেফতারকৃতরা বলেছে, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ছুরিকাঘাতের পর রক্ত দেখে তারা ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়।’
ঘটনার পর হাসপাতাল থেকে উর্মির পালিয়ে যাওয়া এবং কললিস্ট মুছে ফেলার বিষয়ে আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্কের কারণে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে, এমন তথ্য আমরা পাইনি।’ তিনি বলেন, ‘উর্মি হাসপাতাল থেকে চলে যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তাকে পাওয়া যায়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, সে জানতে পারে নিহত বুলবুলের জানাজা ক্যাম্পাসে হবে। জানাজায় শরিক হতে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসে। তার চলে আসার পেছনে অপরাধমূলক কিছু পাওয়া যায়নি।’
পুলিশ উর্মির মোবাইল ও কললিস্ট চেক করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের কারো সাথে উর্মির যোগাযোগ ছিল না। তার মোবাইলে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়নি।’
এদিকে ঘটনার পর যে তিনজনকে আটক করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে আবুল হোসেনকে স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বাকি দুজনকে এখনও পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে এবং তাদেরকে অভিভাবকদের জিম্মায় প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের বিষয়ে তদন্ত চলমান আছে বলেও জানায় তারা।
টিলারগাঁও এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীকালু টিলার একেবারে লাগোয়া এলাকা হচ্ছে টিলারগাঁও এলাকা। কামরুল পেশায় রাজমিস্ত্রি। প্রায় ১৪ বছর ধরে তিনি এ পেশায় জড়িত আছেন। কামরুল বিবাহিত, তার তিন সন্তান আছে। আবুলও রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। এ ছাড়া হাসান অ্যাম্বুলেন্সের হেলপার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, বুলবুল হত্যাকান্ডের পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা বাড়াতে এরই মধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যার পর আলোর স্বল্পতা দূর করার পাশাপাশি সব খানে সিসি ক্যামেরা লাগানো ও নিরাপত্তাপ্রহরী বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নিহত বুলবুলের পরিবারকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঁচ লাখ টাকা দেবে বলে জানান তিনি।
গত সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাশে গাজীকালু টিলা লাগোয়া ‘নিউজিল্যান্ড’ এলাকায় বুলবুল ছুরিকাহত হন। পরে তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে রাত পৌনে আটটার দিকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় রাতেই সিলেট মহানগরের জালালাবাদ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন।
বুলবুল লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি নরসিংদী সদর উপজেলার নন্দীপাড়া গ্রামে।
কেএস