দেশের অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মানারাত ইউনিভার্সিটির ট্রাস্ট অবৈধভাবে দখল ও শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্টের প্রতিবাদে সমাবেশ ও মিছিল করেছে গুলশানের বাসিন্দারা।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর গুলশানের শাহাজাদপুর এলাকায় সচেতন গুলশানবাসীর ব্যানারে এই সমাবেশ ও মিছিল করে তারা।
মিছিল পূর্ব সমাবেশে লিখিত বক্তব্যে গুলশান সমাজ উন্নয়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান এম এইচ বান্না চৌধুরী বলেন ,মানারাত দীর্ঘদিনের সুপ্রতিষ্ঠিত স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। এখানে পড়ালেখা করে অনেকে জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এখানে আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করছে, আগামী প্রজন্মও পড়ালেখা করবে। এ জন্য আমরা দ্ব্যার্থহীন কন্ঠে বলতে চাই, মানারাত বিশ্ববিদ্যালয় দখলের মাধ্যমে যদি উদ্দেশ্য হয় স্কুল ও স্কুলের জায়গা দখল করা, তাহলে গুলশানবাসী তা মেনে নেবে না।
সরকারের ও ইউজিসি নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জায়গার অভাব নেই। আর মানারাত স্কুলের জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে না এটি সরকারের সিদ্ধান্ত। সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য আশুলিয়ায় ১০ বিঘা জায়গা ক্রয় করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে ট্রাস্টি বোর্ড। সুতরাং সেখানেই মানারাত বিশ্ববিদ্যায়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের কার্যক্রম সম্পূর্ণরুপে পরিচালনা করবে।
মানারাত স্কুলের জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস করা আইন সম্মত নয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বেআইনি কোনো কার্যক্রম মেনে নেবে না গুলশানবাসী। আমরা মানারাত স্কুল ও কলেজ এবং মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ক্ষতি চাই না। মানারাত স্কুল ও কলেজ এবং মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের কোনো অশুভ পাঁয়তারাকেও আমরা মেনে নেবো না। এর বিরুদ্ধে আমরা অব্যাহতভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
স্কুলে শিশুদের সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনি একজন শিক্ষানুরাগী মানুষ। আপনি বলেছেন, যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকবে, সেখানে খেলার মাঠ থাকতে হবে। মানারাত স্কুলের মাঠ ইংরেজী মাধ্যম সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় সকল শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করে। এখানে শিক্ষার্থীদের নানা রকম প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে। তাই এটিকে অক্ষত রাখতে আপনার পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ।
কূটনৈতিক জোনের নিরাপত্তার কথা উদ্বৃত করে বান্না বলেন, এই কূটনৈতিক জোনে মানারাত বিশ্ববিদ্যায় স্থাপিত হলে তা এই এলাকার নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করবে। কারণ ইতোমধ্যে ছাত্রলীগ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি দিয়েছে। সুতরাং কোনো অবস্থাতেই এই জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় রাখা যাবে না। একইভাবে মানারাত স্কুলের জায়গা অধিগ্রহণ বা ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। সুতরাং সরকারের নির্দেশনার আলোকে মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়কে আশুলিয়ায় নিয়ে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ছাত্রছাত্রীদের চাহিদা বেশি থাকায় মানারাত স্কুল তার নিজের জায়গায় অপরিবর্তিত অবস্থায় রাখতে হবে। যাতে আরও বেশি ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখার সুযোগ করা যায়।
যে কোনো ষড়যন্ত্রকে রুখে দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমরা গুলশানবাসীর পক্ষ থেকে পরিস্কার বলে দিতে চাই, মানারাত স্কুলের জায়গা নিয়ে কোনো রকমের ছলচাতুরি করা চলবে না। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না।
একই সঙ্গে গত ৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙ্গে দিয়ে মানারাতের যে নতুন অবৈধ বোর্ড করা হয়েছে তা ভেঙে দিয়ে পূর্বের বোর্ডকে বহালের দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে গুলশানবাসী ও সচেতন নগরবাসী প্রতিবাদ করবো ও প্রতিরোধ গড়ে তুলবো। আমরা এই দখলবাজ ট্রাস্টি বোর্ডকে গুলশানবাসীর পক্ষ থেকে প্রত্যাখ্যান করছি।
সমাবেশ ও মিছিলে গুলশানের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গুলশান ইন্টিগ্রেটি সেন্টারের সাংগঠনিক সম্পাদক রায়হানুল কবির ভুঁইয়া, হারুন অর রশিদ ভুইয়া, আহসানুল করিম, আশিক ইকবাল প্রমূখ।
শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে, মানারাতকে বাঁচানোর স্বার্থে যে কোনো কর্মসূচিতে গুলশানবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে সমাবেশ শেষ করে শান্তিপুর্ণ মিছিল শুরু করেন।
এবি