৭ মাসেও চালু হয়নি হাবিপ্রবি’র নব-নির্মিত ছাত্রী হল

মশিউর রহমান, হাবিপ্রবি প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২২, ০৬:৪৬ পিএম
৭ মাসেও চালু হয়নি হাবিপ্রবি’র নব-নির্মিত ছাত্রী হল

গত মার্চ মাসে (২০২২) সম্পূর্ণরুপে চালু হওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তী সাত মাস পার হলেও চালু হয়নি দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) নব-নির্মিত ছয় তলা বিশিষ্ট ছাত্রী হল।

এ বছরের গত জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক জানানো হয়েছিল, নির্মাণাধীন ছয় তলা বিশিষ্ট ছাত্রী হলের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। বহুল প্রত্যাশিত এই হলটিতে মার্চ মাস নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা উঠতে পারবে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসেও এই নতুন ছাত্রী হল এখনো চালু হয়নি।

এদিকে মেয়ে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে দিনাজপুর শহর কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় (বাঁশেরহাট) বিভিন্ন মেসে থাকতে হচ্ছে। এরফলে প্রতিনিয়ত চুরি, ছিনতাই সহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় শিক্ষার্থীদের।

হল প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার (বাঁশেরহাট) মেয়েদের সব মেস চুক্তিভিত্তিক। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেসের চুক্তি থাকে, কোন শিক্ষার্থী মেসে উঠলে তাকে কমপক্ষে এক বছর মেসে থাকতে হয়।

ইতোমধ্যেই ১৭ ও ১৮ ব্যাচের মেয়ে শিক্ষার্থীদের মেস ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে মেস মালিকরা। যদিও প্রশাসন চুক্তি ছাড়া মেসে উঠতে বলেছে শিক্ষার্থীদের, তবে বাঁশেরহাটে চুক্তি ছাড়া কোন মেস নাই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সব কিছুর দাম বেড়েই চলছে।

এদিকে, মেস মালিকরাও সিট ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছে, শিক্ষার্থীদের পরিশোধ করতে হচ্ছে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল। এখানকার মেস মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা কারণে যখন তখন তারা নিজেদের মত করে নিয়ম চাপিয়ে দেয়।

এসমস্যা থেকে উত্তোরণের জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে অধীর আগ্রহে চেয়ে আছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নতুন হলের আশ্বাস দিয়ে রাখার কারণে অন্যান্য আবাসিক হলগুলোতেও ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের তোলা হচ্ছে না। সব মেয়েদের মেসে এই নভেম্বর মাসের মধ্যে মেস ছাড়ার বিষয় কনফার্ম করতে বলেছে মেস মালিকরা।

ডিসেম্বর মাসে মেসের সিট ছাড়তে হবে, রীতিমতো আল্টিমেটাম দিয়েছে মেস মালিকরা। আর যদি কোনো শিক্ষার্থী মেসে থাকতে চায় তাহলে তাকে সামনের বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকতে হবে। তাই, আমরা আশা করছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের এবিষয়টি গুরুত্বসহ কারে দেখবেন, শিক্ষার্থীদের সকল দিক বিবেচনা করে খুব শীঘ্রই নতুন ছাত্রী হল চালু করবেন।

নব-নির্মিত ছাত্রী হলে সরেজমিনে গিয়ে হলের নির্মাণকাজ সহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বর্তমান কাজের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রথম অবস্থায় কেউ কথা বলতে রাজি হয় নি। পরবর্তীতে বারবার চেষ্টার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নব-নির্মিত হলের নির্মাণ কাজে দায়িত্বে থাকা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার মোঃ সেলিম এর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়।

এসময় তিনি জানান, “বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ছাত্রী হলের নির্মাণ কাজের দায়িত্বে আমি ছিলাম, তবে এ বছেরের গত জুনের মাসের ৩০ তারিখে নির্মাণকাজের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগ সম্পূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। এখন বিভিন্ন কাজ বিভিন্ন বিভিন্ন ব্যক্তি বা শাখাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আমি যতদুর জানি বর্তমানে ফার্ণিচারের কাজ চলছে, তবে কাজ শেষের দিকে”।

নবনির্মিত হল কবে নাগাদ উদ্বোধন হবে এবং হলের বর্তমান সার্বিক অবস্থাসহ বিস্তারিত জানতে চাইলে নবনির্মিত ছাত্রী হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত হল সুপার অধ্যাপক ড. আফরোজা খাতুন বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যতদ্রুত সম্ভব হলে ছাত্রী উঠানোর, তবে ফার্ণচার ঠিক মতে পাই নি সেজন্য উটাতে পারছি না। ফার্ণিচার যার কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে তাঁকে আমি গত সপ্তাহে জানিয়েছি। ফার্ণিচার আসলে আমাকে জানাবে, তার পর চেক করি সেগুলো হলে উঠাবো।

হল কবে নাগাদ নতুন হল চালু হতে পারে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা তো গত মার্চ মাস থেকে নতুন ছাত্রী হল উদ্বোধন করতেছি, এখনো তো পারি নাই। আমার চাচ্ছি যেনো ডিসেম্বরের মধ্যেই ছাত্রীদের হলে উঠাতে পারি, সে জন্য আমরা চেষ্টা করছি।

নবনির্মিত ছাত্রী হলের নির্মাণকাজ সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব প্রাপ্ত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল শাখার পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোঃ তারিকুল ইসলাম বলেন, ছাত্রী হলের নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়েছে, তবে আনুষঙ্গিক কিছু কাজ বাকি ছিলো যেমন-ডাইনিং, রুমের বেড স্থাপন, রান্নাঘর, গেট, বাউন্ডারি দেয়াল এগুলো কাজ শেষ করতে একটু দেরি হলো। তবে অচিরেই একাজ গুলো শেষ হয়ে যাবে।

নব-নির্মিত ছাত্রী হল সম্পূর্ণভাবে কবে নাগাদ চালু হতে পারে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ছাত্রী হলে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য সাব-স্টেশন স্থাপন করা প্রয়োজন, সেটির স্থাপনের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে সেজন্য ট্রান্সফর্মার নিয়ে আসা হয়েছে। আমি আশা করছি নভেম্বর মাসের মধ্যেই এ কাজটি শেষ হবে এবং দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য সে অনুযায়ী চেষ্টা করছি। এ মাসের মধ্যে সাব স্টেশনের কাজ শেষ হলেই নতুন ছাত্রী হল চালু হবে।
 

উল্লেখ্য, নব-নির্মিত এই আবাসিক ছাত্রী হলে কোন গণরুম থাকবে না এবং ভবনের প্রতিটি কক্ষ হবে ৪ আসন বিশিষ্ট।

এছাড়াও হলটিতে প্রধান ভবন ছাড়াও তিন তলা বিশিষ্ট আলাদা একটি ভবন তৈরি করা হয়েছে। এই ভবনটির প্রথম তলায় থাকছে ডাইনিংয়ের ব্যবস্থা এবং দ্বিতীয় তলায় থাকছে ক্যান্টিনের ব্যবস্থা এবং তৃতীয় তলায় থাকছে জিমনেশিয়াম এবং কমনরুমেরও ব্যবস্থা।

এছাড়াও পড়াশোনা করার জন্য হলের দ্বিতীয় তলায় থাকছে রিডিং রুমেরও ব্যবস্থা। হল সুপারদের জন্য থাকবে পৃথক রুম এবং হল অফিস রুম। মেয়ে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা করার জন্য থাকছে প্লে-গ্রাউন্ড। নবনির্মিত হলটি ৭২০টি আসন বিশিষ্ট হওয়ার কথা থাকলেও আসন সংখ্যা থাকবে ৬৪০টি।

এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের হলে সিট বরাদ্দের সময় জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রাধান্য দেওয়া হবে এবং একই ব্যাচ ও একই ডিপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে সিজিপিএ বিবেচনা করা হবে। নবনির্মিত হলের নির্দিষ্ট কোন নাম এখনো পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক চূড়ান্ত করা হয়নি বলে জানা গেছে।

এআই