কম খরচে রক্তনালীর আঁকাবাঁকা শিরার চিকিৎসা বিএসএমএমইউতে

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২২, ০৪:৩৭ পিএম
কম খরচে রক্তনালীর আঁকাবাঁকা শিরার চিকিৎসা বিএসএমএমইউতে

যারা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করেন তাদের পায়ের গোড়ালিতে ও রক্তনালীর শিরায় নানা সমস্যা দেখা দেয়। এসব মানুষদের জন্য বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) কাটা-ছেঁড়া ছাড়া অত্যাধুনিক আরএফএ মেশিনে রক্তনালীর আঁকাবাঁকা শিরা (ভেরিকোস ভেইন) চিকিৎসা শুরু হয়েছে।

এই চিকিৎসায় সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা খরচ হবে। দেশের বাইরে গিয়ে এই চিকিৎসায় তিন লাখ টাকার মতো খরচ হয়ে থাকে বলে জানিয়েছে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। 

বুধবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ব্লকে ভাস্কুলার সার্জারি আয়োজিত অত্যাধুনিক আরএফএ মেশিনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, যারা দিন-রাত দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করেন, তাদের পায়ের গোড়ালিতে ও রক্তনালীর শিরায় নানা সমস্যা দেখা দেয়। এই লোকগুলোর কিন্তু অনেক বেশি টাকা নেই যে, দুই-তিন লাখ টাকা খরচ করে এর চিকিৎসা করবে। আমরা কোনো রকম কাটা-ছেঁড়া ছাড়াই রক্তনালীর জটিল আঁকাবাঁকা শিরায় উন্নত প্রযুক্তির আরএফএ মেশিনের মাধ্যমে চিকিৎসা করি। এমনকি, মাত্র এক থেকে দুই দিনের মধ্যে রোগীকে বাড়িতে পৌঁছে দেই। একদিনের মধ্যেও রোগী বাড়ি চলে যায়।

খরচ প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে যেখানে এই চিকিৎসায় দুই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হয়, সেখানে আমাদের হাসপাতালে মাত্র ৪০ হাজার টাকা খরচ হবে। এমনকি গরিব-অসহায় রোগী যারা আছে, তাদের মধ্য থেকে ৮০ জনকে আমরা বিনামূল্যে চিকিৎসা দেব।

শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, কার্ডিয়াক সার্জারির জন্য প্রচুর লোক বিদেশে যায়। অথচ আমাদের হাসপাতালে এই সার্জারিগুলো হচ্ছে। রোগীদের এখন আর বিদেশ যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

তিনি বলেন, একটা সময় আমাদের ভাস্কুলার সার্জারিতে শুরুতে কোনো কোর্স ছিল না, শিক্ষক ছিল না এমনকি বিভাগে কোনো বেড ছিল না। আস্তে আস্তে একজন-দুইজন করে শিক্ষক হয়েছে, বেডও হয়েছে। একটা পর্যায়ে এসে ৩০০টি সার্জারি এই বিভাগে হয়েছে। 

উপাচার্য বলেন, জাতির জনকের নামে আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়। সুতরাং আমাদের দায়িত্ব অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। এই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা কর্মরত তাদের সারাদেশের কথা ভাবতে হবে। কারণ সারাদেশের মধ্যে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন আমাদের এখানে শুধু। এখান থেকে পাস করে শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞ হন। আর এখান থেকে পাস করেই জেলা উপজেলায় কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করেন। অর্থাৎ আমাদের অনেক দায়িত্ব।

প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিএসএমএমইউ উপাচার্য আরও বলেন, পদ্মাসেতু হওয়ায় আমরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। এই সেতুর কারণে এখন খুলনা থেকেও তিন ঘণ্টার মধ্যে রোগী ঢাকায় এসে চিকিৎসা নিতে পারে। আর ওই রোগী যদি আমার স্ট্রোক সেন্টারে আসে, তাহলে সুস্থ হয়ে সাত দিনের মধ্যে বাড়ি চলে যেতে পারবে। দিনের পর দিন আর বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে না। 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. সাইফ উল্লাহ খান। আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ও হল প্রোভোস্ট অধ্যাপক ডা. এসএম মোস্তফা জামান।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভাস্কুলার সার্জারি সার্জন ডা. সমরেশ চন্দ্র সাহা। এসময় নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সবুজ, ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রবিকুল হাসান, সহযোগী অধ্যাপক (সার্জিক্যাল অনকোলজি) ডা. মো. রাসেল হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. রসুল আমিন, সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফয়সাল ইবনে কবির ও বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাসুম আলম উপস্থিত ছিলেন।

টিএইচ