নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
রোববার (৪ ডিসেম্বর) বেলা ১১ টায় এই বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ঢাবির ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।
সকাল ১১ টায় ঢাবির টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পূর্ব ঘোষিত অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে। ধীরে ধীরে ছোট ছোট মিছিলের মাধ্যমে যোগ দেয় আরো কয়েশত সাধারণ শিক্ষার্থী।
শুরুতে শিক্ষার্থীরা দুর্ঘটনায় মৃত রুবিনা আক্তারের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন। এসময় কিছু শিক্ষার্থীকে প্লেকার্ড হাতে, মুখে ও চোখে কালো কাপড় বেধে বসে অবস্থান করতে দেখা যায়।
পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা বিশাল মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। টিএসসি থেকে সেন্ট্রাল মসজিদ হয়ে এফবিএস অনুষদের সামনে দিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে হাজির হন। পরবর্তীতে তারা ভিসি চত্বর হয়ে শহীদ মিনার রোডে ঘুরে কার্জনে প্রবেশ করে। এসময় তাদের রাজু ভাস্কর্য, ভিসি চত্বরের সামনে কিছু সময় অবস্থান নিয়ে নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে স্লোগান দিতে থেকেন।
এসময় শিক্ষার্থীদের, দাবি মোদের একটাই: নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই; এগারো দফা এক দাবি: মানতে হবে মানতে হবে; ক্যাম্পাসে রক্ত কেন: প্রশাসন জবাব দে; বিবেককে প্রশ্ন করি: এবার যদি আমরা মরি- সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের হাসিবুল ইসলাম বলেন, আমরা ক্যম্পাসে আর কোনো রক্ত দেখতে চাই না। আমরা ক্যাম্পাসে অনিয়ন্ত্রিত গতিতে চলাচল করা যানবাহন দ্বারা ঘটে যাওয়া ছোটখাটো দুর্ঘটনা দেখেছি। আমরা টিএসসি সহ পুরো ক্যাম্পাসে সুন্দর পরিবেশ দেখতে চাই। যেখানে থাকবে না কোনো বহিরাগত গাড়ি, চলবে না ট্রাক সহ ভারী যানবাহন।
২য় বর্ষের শিক্ষার্থী হাসান ইনাম বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে ভিতরে যানবাহনের একটা নির্দিষ্ট গতিসীমা চাই যা সকল যানবাহন মানবে, পর্যাপ্ত ট্রাফিক ব্যাবস্থা থাকবে, পর্যাপ্ত স্পিড ব্রেকার দিতে হবে পুরো ক্যাম্পাসে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ১১ দফা দাবি পেশ করেছি। আমরা ভিসি স্যার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবো। তিনি ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, এর মাঝে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে কঠোর আন্দোলন ও অবস্থান কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
অবস্থান কর্মসূচির শুরুতেই আইন অনুষদের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী আনিকা তাহসিনা শিক্ষার্থীদের পক্ষে নিরাপদ ক্যাম্পাস অর্জনের লক্ষ্যে ১১ দফা দাবি পেশ করেন।
উত্থাপিত ১১ দফা দাবিসমূহ-
১। বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ, শব্দ দূষণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা ও শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা।
২। রুবিনা আক্তার হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ সমর্থন ও সহযোগিতা আদায় করা।
৩। ক্যাম্পাসে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণের লক্ষে প্রধান প্রবেশদ্বারগুলোতে দ্রুত চেকপোস্ট বসানো ও গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা।
৪। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শুধুমাত্র নিবন্ধিত রিক্সা চলাচল এবং রিকশাচালকদের জন্য ইউনিফর্ম ও ভাড়ার চার্ট প্রস্তুত করা।
৫। ভ্রাম্যমান দোকানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ ও প্রশাসন কর্তৃক যথাযথ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করা।
৬। প্রথম বর্ষ থেকে সকল শিক্ষার্থীর আইডি কার্ড প্রদান করা এবং ক্যাম্পাসের কিছু স্থানে সংরক্ষিত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা।
৭। মাদকাসক্ত ও ভবঘুরে ব্যক্তিদের ক্যাম্পাস থেকে স্থায়ী উচ্ছেদ করা।
৮। সম্পূর্ণ ক্যাম্পাসকে সিসিটিভির আওতায় আনা এবং ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা।
৯। প্রক্টর অফিসে জমে থাকা সকল অভিযোগ নিষ্পত্তি করা।
১০। নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার লক্ষে প্রক্টোরিয়াল অফিসের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
১১। নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিগুলো বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় রুবিনা আক্তার নামের এক নারীর। বেপরোয়া প্রাইভেটকার চালক তাকে টেনে হিঁচড়ে দেড় কিলোমিটার দূরে নীলক্ষেত মোড়ে নিয়ে যায়। জনতা নারীকে দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিলে কিছুক্ষণ পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কেএস