চলতি বছরের ৩ জুলাই দৈনিক আমার সংবাদ অনলাইনে ‘নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ম ভেঙে শিক্ষক নিয়োগ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর তা আমলে নেয় ইউজিসি। সংবাদের সত্যতা জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এরপর তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক আমার সংবাদ।
একাধিক তদন্ত শেষে প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা মেলেছে বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গেলো মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৯ তম সিন্ডিকেট সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে আলোচনা করে এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নকিবুল হাসান খানকে সহকারী অধ্যাপক পদ থেকে পদাবনতি করে প্রভাষক পদে নামিয়ে আনা হয়েছে।
এমন সিদ্ধান্তের সত্যতা নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, আমাদের বর্তমান প্রশাসন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। নিয়মের বাইরে কোন কাজ করে না। এমনকি অনিয়মকেও প্রশ্রয় দেয় না। নকিবুল হাসান খানের বিষয়ে গণমাধ্যমে এবং ইউজিসি থেকে নিদর্শনা আসায় আমরা সেটি নিয়ে কাজ করে যা পেয়েছি তাতে তার বিষয়ে উঠে আসা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তাই তাকে পদাবনতি করার অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা।
পদাবনতি নিয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তুহিনুর রহমান (তুহিন অবন্ত) বলেন, আমরা শুনেছি আমাদের একজন শিক্ষকের নিয়োগ সংক্রান্ত কিছু সমস্যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট পদাবনতি দিয়েছে তাকে। তবে এই নিয়ে আমি বিস্তারিত জানিনা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি তদন্ত করে এই সিদ্ধান্ত নেয় তবে সেটি হবে যথাযথ প্রক্রিয়া। যদি এই নিয়ে সংকট দেখা দেয় তখন সেটি নিয়ে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবো।
গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১ টায় শুরু হওয়া সিন্ডিকেট সভা শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। উপাচার্যের নিজ কার্যালয়ে অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের সঞ্চালনায় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে পদাবনতি পাওয়া শিক্ষক নকিবুল হাসান খানের মন্তব্য জানতে ফোন করেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
শিক্ষক পদে আবেদন করতে হলে এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে ফলাফল থাকতে হবে জিপিএ ৪.০০ (৫.০০ স্কেলে)। একই সঙ্গে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে থাকতে হবে সিজিপিএ ৩.৫০ (৪.০০ স্কেলে)। তবে বিশেষ যোগ্যতা (পিএইচডি, স্বীকৃত দেশি-বিদেশি অ্যাওয়ার্ড বা আন্তর্জাতিক মানের জার্নালে প্রথম অথর হিসেবে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধ) থাকলে যেকোনো একটি শর্ত শিথিল করা যাবে। এছাড়া পুরো শিক্ষাজীবনে তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করেছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু উল্লিখিত শর্ত ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন মো. নকিবুল হাসান খান।
জিপিএ ৫.০০ স্কেলে চতুর্থ বিষয় ছাড়া ৩.২০ পেয়ে পাস করা নকিবুল হাসান ভেঙেছেন প্রায় প্রত্যেকটি শর্ত। তিনি ২০০২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয়সহ ৩.৮৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয়সহ পান ৩.৫০। যার অর্থ চতুর্থ বিষয় ছাড়া তার গড় ফলাফল দাঁড়ায় জিপিএ ৩.২০। এ ফলাফলে বিজ্ঞপ্তির নিয়মানুযায়ী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করারই সুযোগ না থাকলেও প্রভাষক পদে নিয়োগ পান নকিবুল হাসান। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে তার উল্লিখিত একাডেমিক তথ্যের সত্যতা মিলেছে। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে এইচএসসি পাস করলেও গণিত ছাড়া বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কোর্সে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির নম্বর পেয়েছেন নকিবুল হাসান। অন্যদিকে ইংরেজিতে পেয়েছিলেন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নম্বর। শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা না থাকলেও প্রশাসনিক বিজ্ঞপ্তির বাইরে গিয়েও ২০১৬ সালের ১০ জানুয়ারি নিয়োগ পেয়েছেন এই শিক্ষক। এছাড়া নিয়োগ আবেদনের ফরমেও করেছেন তথ্য গোপন। এসকল অভিযোগের সত্যতা মেলায় পদাবনতির শাস্তি পেয়েছেন এই শিক্ষক।
নকিবুল হাসান খান ছিলেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্র। অভিযোগ রয়েছে, তার সরাসরি এক শিক্ষকের সম্পৃক্ততাও ছিল নিয়োগে বোর্ডে এক্সপার্ট হিসেবে। তিনি হলেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম। নিয়োগের বিষয়ে যোগাযোগ করেও সেসময় মন্তব্য পাওয়া যায়নি এই অধ্যাপকের।
এসএম