দীর্ঘ সাতটি বছর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৬ষ্ঠ সমাবর্তন। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে যেন উৎসবের আমেজ বয়ে যাচ্ছে সবার মনে। নিয়ম অনুযায়ী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা সমাবর্তন নিতে পারবেন। এর পাশাপাশি এম ফিল, পিএইচডি শিক্ষার্থীদেরকে ও সমাবর্তন দিচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক গ্র্যাজুয়েট (প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার) এবার সমাবর্তন নিচ্ছেন। গত ২০ তারিখ থেকে গ্র্যাজুয়েটদেরকে সমাবর্তনের উপহার সামগ্রী দেয়া শুরু করেছে প্রশাসন। কাজের সুবিধার্তে প্রতিটা ফ্যাকাল্টি অনুযায়ী এই দায়িত্ব বন্টন করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। উপহার সামগ্রীর মধ্যে ছিল একটি গাউন (যা পরবর্তীতে ফেরত দিয়ে সার্টিফিকেট নিতে হবে), সমাবর্তনের টুপি, একটি মগ ও সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করার রেজিস্ট্রেশন কার্ড (যা না থাকলে প্যান্ডেলে প্রবেশ করা যাবে না)। এসব উপহার সামগ্রী হাতে পাওয়ার পর থেকেই উৎসব-আমেজে মেতেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ক্যম্পাসের উল্লেখযোগ্য স্থানে সমাবর্তনের গাউন পরে ছবি তোলায় ব্যাস্ত শিক্ষার্থীরা। থেমে নেই ক্যাম্পাসের রানিং শিক্ষার্থীরাও (স্নাতক পাশ নয়)। নিজেরা এবার সমাবর্তন নিতে না পারলেও বড় ভাই, আপুদের গাউন নিয়ে ছবি তুলতে ছাড়ছে না কেউ।
এমনি এক শিক্ষার্থীর সাথে কথা হচ্ছিল, প্রাণখুলে মনের আকাঙ্ক্ষা জানিয়ে তিনি বলেন, এবার সমাবর্তন নিতে পারিনি কারণ স্নাতক শেষ হয়নি, কিন্তু ক্যাম্পাসের সমাবর্তনের যে উৎসব চলছে তাতে শরিক না হয়ে থাকতে পারি নি। ভাইদের গাউন, টুপি নিয়ে ছবি তুলে রাখছি, ফেইসবুক, ইন্সটাগ্রাম এ আপলোড দিচ্ছি। এভাবেই চলছে আমাদের উৎসব।
এবারের সমাবর্তন নিবেন এমন একজন জানাচ্ছিলেন সার্বিক বিষয়ে। ক্যাম্পাসের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী নুর হাছান নাঈম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ান্ন বছরের ইতিহাসে এবার ৬ষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবং আমরা সর্বশেষ ব্যচ(৪৬) হিসেবে যারা স্নাতক শেষ করেই সমাবর্তন পাচ্ছি, এটি আমাদের জন্য খুবই আনন্দের। আমরা আশা করব সমাবর্তনের যে দীর্ঘসূত্রিতা সেটি কাটিয়ে উঠতে প্রশাসন আন্তরিক ভূমিকা রাখবে এবং প্রতি বছরই যেন এই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় সে বিষয়ে আরও তৎপর হবে। সর্বোপরি সমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে যে উৎসব আমেজ বিরাজ করছে এর দ্বারা আমাদের মধ্যে আন্তসম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে বলে আমি আশা করি।
তিনি আরও বলেন, যেকোন বড় কাজ হাতে নিলে সে বিষয়ে আলোচনা সমালোচনা থাকে, সমাবর্তন কেন্দ্রিক ও ছোটখাট কিছু সমস্যা ছিল, তবে সবকিছু ছাপিয়ে এখন ক্যাম্পাসে উৎসবমূখর পরিবেশব বিরাজ করছে, সবাই এখন খবই উৎফুল্ল।
সাবেক শিক্ষার্থী ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মাহিদুল ইসলাম মাহি বলেন, আমি প্রথম সমাবর্তন পেয়েছিলাম ২০১৫ সালে স্নাতক পাশ করার পর। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন একটা অন্যরকম আমেজ কাজ করছিল। তবে এবারের উচ্ছাস একটু ব্যাতিক্রম। কেননা, পূর্বের সময়ে আমরাই বেশির ভাগ ছিলাম কিন্তু এবার সিনিয়র জুনিয়র নিয়ে একটা গ্যাট-টুগেদার, বিনোদনের মতো হবে। আমাদের মধ্যে অনেকেই বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে আসবেন, যার প্রেক্ষিতেস পারিবারিক মিলনমেলার মতো ফিল হচ্ছে।
ইংরেজি বিভাগের ঈমন মাহমুদ বলেন, প্রায় সাত বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক জীবন শেষে সমাবর্তন অত্যন্ত গুরূর্ণ এবং আকাক্সিক্ষত অনুষ্ঠান। একই সাথে সাবেক শিক্ষার্থীরাও সমাবর্তনে যোগদানের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছেন, ফলে সমাবর্তন একপ্রকার মিলনমেলাতেও রূপান্তরিত হয়েছে। সমাবর্তনের এই উৎসবে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে জাবির প্রতিটা প্রান্তর। নবীনদের সাথে সাবেকদের এই মেলবন্ধন নবীন শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও পেশাগত জীবনেও অনুপ্রাণিত করবে বলে মনে করি।
এদিকে সমাবর্তনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্যান্ডেল এর ব্যাবস্থা করেছে তাতে খরচ হয়েছে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা প্রায়। বিশাল এ কর্মযজ্ঞকে সাফল্য মন্ডিত করতে দীর্ঘ একমাস যাবৎ চলছে অক্লান্ত পরিশ্রম। প্রত্যেক বিভাগের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে আলাদা শিক্ষক, ঘটন করা হয়েছে ১৫ টির মতো উপকমিটি। নিরাপত্তা জোড়দার করার জন্য নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যাবস্থা। ক্যাম্পাসে ইতিমধ্যে এসএসএফ(স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) চলে এসেছেন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যাক্তিটির নিরপত্তা যে কোন খামখেয়ালিপনা নয়। এতদসত্তেও ক্যাম্পাস মেতেছে তার আপন মায়ায়।
সমাবর্তনকে কেন উৎসব বলা হচ্ছে, এর উত্তর পাওয়া যাবে সোশ্যাল মিডিয়া পরখ করলে। দীর্ঘ সাত বছর অপেক্ষার পর এর আগমন হয়েছে যেন বছরে একবার দেবী দুর্গার আগমনের মতো। যেন দীর্ঘকাল এর জন্যই অপেক্ষায় থাকা। নিতান্তই স্বভাবিক হওয়ার কথা। কেননা একজন শিক্ষার্থীর অনেককিছু পাওনা থাকে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদায় নিতে সমাবর্তন থেকে বড় পাওনা আর কিছু হতে পারে না। সমাবর্তন পাওয়ার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর ছাত্রজীবন শেষ হওয়ার সে স্মৃতি ডায়েরিতে লিখা রাখার মতো।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম বলেন, আমাদের প্রুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। আশা করছি আগামীকালের মধ্যেই আমাদের সমস্ত কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। এই ৬ষ্ঠ সমাবর্তন গ্রহণকারী সকলকে জানাই আমার প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমাদের অনুষ্ঠানে আসার সম্মতি জ্ঞাপন করায় আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ। ক্যাম্পাসে এখন যে উৎসব মূখর পরিবেশ বিরাজ করছে, আশা করি একটি সফল সমাবর্তনের মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটবে।
কেএস