ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নবীন শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলেও উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম ছুটিতে থাকায় এখনও কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) হল কতৃপক্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের সত্যতা নিশ্চিত করে হল কতৃক গঠিত কমিটি অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীর হলের স্থায়ী আবাসিকতা বাতিল করলেও বিশ্ববিদ্যালয় কতৃক গঠিত তদন্ত কমিটির করা বিভিন্ন সুপারিশ এখনও দোদুল্যমান অবস্থায় আছে উপাচার্যের ছুটি শেষ হওয়ার অপেক্ষায়।
দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল কতৃক বহিষ্কৃত পাঁচজন হলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান, আইন বিভাগের ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের ইসরাত জাহান মীম, ও চারুকলা বিভাগের ২০২০-২০২১ হালিমা আক্তার উর্মী।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদাত আজাদ বলেন, ভিসি স্যার আগামী ৪ তারিখ ক্যাম্পাসে আসবেন। তিনি না আসা পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদনটি সিলগালা অবস্থায় থাকবে। তিনি এসেই তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবেন।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বিশ্বিবদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতন সহ তার কন্ঠ সদৃশ কয়েকটি অডিও ফাঁস হওয়ায় ক্যাম্পাসে চলমান নানা অস্থিরতার মধ্যে স্বপরিবারে ক্যাম্পাস ছাড়েন।
এদিকে মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) এ তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি হবে। গতকাল (২৭ ফেব্রুয়ারি) ইবির ডেপুটি রেজিস্ট্রার মনিরুজ্জামান মিল্টন তদন্ত প্রতিবেদনটি হাইকোর্টে জমা দেন।
শেখ হাসিনা হলের পাঁচজন অভিযুক্তকে হল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের বিষয়ে ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুন বলেন, হল কতৃপক্ষের সিদ্ধান্তে আমার প্রত্যাশা অপ্রত্যাশা বলতে কিছু নেই। তদন্তের মাধ্যমে যেটা সত্য সেটাই বের হয়ে আসুক আমি এতটুকুই চাই।
তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ত্রিশ জনের সাক্ষাৎকার নিয়ে ৮০ পৃষ্ঠার অধিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। রাত ১২টা থেকে আনুমানিক রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ঘটনা সংঘটিত হয়। এর মধ্যে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত দোয়েল-১ রুমে নির্যাতন করা হয়েছে। তারপর সেখান থেকে বের করে ডাইনিং রুমে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত নির্যাতন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বিবস্ত্র করার নির্যাতন এবং শরীরে আলপিন ফুটানোর বিষয়টিও উঠে এসেছে। এছাড়াও যে ভিডিও করেছে সে দাবি করেছে তার মোবাইল ফোন হারিয়ে গেছে। মোবাইল ফোন উদ্ধারের জন্য প্রক্টর বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে মোবাইল ফোন যদি লুকিয়ে রাখে তবে সেটি পাওয়া দুষ্কর।
আরও জানা যায়, বিস্তৃত তদন্ত প্রতিবেদন লেখা এবং সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই বাছাই করার কারণেই একটু সময় লেগেছে। পুরো ঘটনার সারসংক্ষেপ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লিখিত আকারে জমা দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ ও সংযুক্ত রয়েছে। কোথায় কোন কোন ঘটনাগুলো ঘটেছে তার সত্যতাও পাওয়া গিয়েছে।
কেএস