যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যা দিবস পালন

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৩, ০৮:২৪ পিএম
যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যা দিবস পালন

জাতীয় গণহত্যা দিবস-২০২৩ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রি স্মরণে ২৫ মার্চ ২০২৩ শনিবার বিকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট চত্বরে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, ‘একাত্তরে গণহত্যা, পাকিস্তানের দায় ও স্বীকৃতি প্রসঙ্গ’ শীর্ষক আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী কর্মসূচি পালন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। আলোচনা সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন।

সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের যেসব বীর সন্তানেরা আত্মোৎসর্গ করেছেন তাঁরা প্রত্যেকেই আমাদের মডেল। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন উদাহরণ আর নেই যে জাতির ৩০ লক্ষ মানুষ লাফিয়ে লাফিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছেন। ২ লক্ষ মা-বোন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আমাদের যে রক্তের ঋণ সেটি আর কেনো জাতির নেই। এই ৩০ লক্ষ মানুষ এবং ২ লক্ষ মা-বোন কোনো না কোনোভাবে জীবন বাঁচাতে পারতেন কিন্তু সেটি না করে বুক চিতিয়ে জীবন দেয়া সহজ কথা নয়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে একহাতে গুলি করে যাচ্ছেন আর অন্যদের বলছেন তোমরা চলে যাও আমি একাই লড়াই করবো। এভাবে শক্রুর বিরুদ্ধে জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে যুদ্ধ করে গেছেন। এর চেয়ে বড় বীর আর কোথায় খুঁজবো! আমাদের একেকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কাহিনী জানতে পারি বা শুনতে পারি তার মধ্যে রক্তে যে শিহরণ জাগে সেটি আমাদের চলার পথের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।’

প্রবন্ধকার অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছিল। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা সেই হত্যাকাণ্ডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এখনো পাইনি। পাকিস্তানিদের হত্যাযজ্ঞে গণহত্যার সকল ধরনের উপাদান থাকা সত্ত্বেও জাতিসংঘ এখনো সেই স্বীকৃতি দেয়নি। আমাদের জাতীয় ঐক্যমত না থাকার কারণে আমরা গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাইনি। এছাড়া দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে স্বাধীনতাবিরোধীরা এই দেশের শাসন ক্ষমতায় ছিল যেকারণে তারা এটিকে গুরুত্ব দেয়নি। বরং স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি গণহত্যা নিয়ে ধ্রুম্রজাল সৃষ্টি করেছে।’ ১৯৭১ সালের গণহত্যার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘২৫ মার্চের গণহত্যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করতে হলে তরুণ প্রজন্মের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনমত গড়ে তুলতে হবে। আর্মেনিয়া ১০০ বছর ধরে চেষ্টা করে গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে সফল হতে পারলে আমরাও পারবো। চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’

বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও কারিকুলাম উন্নয়ন ও মূল্যায়ন কেন্দ্রের ডিন প্রফেসর ড. মো. মনিরুজ্জামান শাহীনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার, স্নাতকোত্তর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বিন কাশেম, স্নাতকপূর্ব শিক্ষা বিষয়ক স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো. নাসির উদ্দিন, রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেনসহ বিভিন্ন দপ্তরের বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক, গবেষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ।

গণহত্যা দিবসের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীপুর ক্যাম্পাস, ধানমন্ডিস্থ নগর কার্যালয় ও আঞ্চলিক কার্যালয়সমূহে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ কালোব্যাজ ধারণ করে গণহত্যা দিবসের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে।

এআরএস