প্লাস্টিক বোতলেই পরিশোধন হবে বিষাক্ত টেক্সটাইল ডাই-ভারী ধাতু

যবিপ্রবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৩, ০২:৪০ পিএম
প্লাস্টিক বোতলেই পরিশোধন হবে বিষাক্ত টেক্সটাইল ডাই-ভারী ধাতু

টেক্সটাইলশিল্পে বহুল ব্যবহৃত ও দূষণকারী রাসায়নিক পদার্থ হচ্ছে ডাই বা কৃত্রিম রঞ্জক উপাদান। যা বিশ্বব্যাপী প্রায় ২০ শতাংশ পানি দূষণের জন্য দায়ী। সম্প্রতি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) একদল গবেষক প্লাস্টিক বোতলের মাধ্যমে কম খরচে টেক্সটাইল কারখানায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর রঞ্জক উপাদান পরিশোধনে সক্ষম হয়েছেন। তাদের গবেষণাপত্রটি (IWA PUBLISHING) জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও গবেষক দলের দাবি একই প্রদ্ধতি ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন কারখানার ভারী ধাতুযুক্ত দূষিত পানি পরিশোধন করতে সক্ষম হয়েছেন।

টেক্সটাইল শিল্প বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দূষণকারী শিল্প। গতানুগতিক প্রচলিত ডাইং পদ্ধতিতে প্রচুর পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয় এবং বেশিরভাগ বিষাক্ত বর্জ্য (ডাই বা কৃত্রিম রঞ্জক ও ভারী ধাতু) পানির সঙ্গে মিশে পানিকে দূষিত করে থাকে যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

এক্ষেত্রে পানির পুনব্যবহারের জন্য পরিশোধন খরচও অনেক বেশি হয়ে থাকে। টেক্সটাইল কারখানার ব্যবহৃত রঙ নিজে থেকে পরিবেশে বিনষ্ট হয় না (Non-biodegradable), তাছাড়াও পেট্রোলিয়াম ভিত্তিক কালারেণ্ট ফিক্সিং এ ব্যবহৃত বিষাক্ত এজেন্ট জলাশয় ও তার বাস্তুতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। টেক্সটাইল শিল্পে  ব্যবহৃত ডাই এবং রাসায়নিক অনেক শ্রমিকের চর্মরোগ এবং শ্বাসকষ্টের জন্য দায়ী। পাশাপাশি বিভিন্ন কারখানার বর্জ্যে থাকা ভারী ধাতু জলাশয়ের বাস্তুতন্ত্রকে যেমন ধ্বংস করছে , সেই সঙ্গে বিভিন্ন ভাবে মানুষের দেহে প্রবেশ করে ক্যান্সার সহ নানা জটিল রোগের সৃষ্টি করছে।

অন্যদিকে প্লাস্টিক নিজেই এখন বিশ্বব্যাপী একটি জটিল সমস্যা। প্রতিনিয়ত বিশ্বে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করলেও উন্নয়নশীল এবং অনুনত দেশগুলো এইদিক থেকে অনেক বেশি পিছিয়ে আছে। এই কথা বিবেচনায় এনে টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে কম খরচে প্লাস্টিক বোতলকে ব্যবহার করে প্লাস্টিক দূষণ কমানোর নতুন প্রদ্ধতি উদ্ভাবন করাই ছিল গবেষকদলটি মূল লক্ষ্য।

এক্ষেত্রে তারা একটিভেটেড কার্বন প্রোসেসের (Activated Carbon Process) মাধ্যমে প্লাস্টিক চারকোল তৈরি করে এবং এই চারকোলের মাধ্যমে টেক্সটাইল শিল্প ও কারখানার দূষিত পানিতে থাকা ডাই ও ভারী ধাতু পরিশোধন করতে সক্ষম হয়েছে। গবেষকদের দাবী উদ্ভাবনটিকে কাজে লাগিয়ে শিল্প কারখানারগুলো ডি-সেন্ট্রালাইজড প্লান্টের মাধ্যমে কম খরচে তাদের নিস্কাশিত দূষিত পানি পরিশোধন করতে পারবে। এক্ষেত্রে একদিকে যেমন প্লাস্টিক দূষণ কমবে পাশাপাশি কমবে কারখানাগুলোর পানি দূষণের মাত্রা।

এই বিষয়ে গবেষণা দলের প্রধান ও পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক  তাপস কুমার চক্রবর্তী বলেন, আমরা মূলত প্লাস্টিক বোতল দিয়ে একটিভেটেড কার্বন প্রোসেসের (Activated Carbon Process) মাধ্যমে চারকোল তৈরি করেছি। এই চারকোল মাধ্যমেই আমরা টেক্সটাইল শিল্পের পানি দূষণকারী রাসায়নিক ডাই বা কৃত্রিম রঞ্জক উপাদান দূর করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের তৈরি করা প্লাস্টিক চারকোলে বিদ্যমান গ্রাফেন বিভিন্ন শিল্পকারখানার দূষিত পানিতে থাকা রঞ্জক উপাদান ও ভারী ধাতু দূর করতে সক্ষম। শিল্পকারখানাগুলোতে ডি-সেন্ট্রালাইজড প্লান্টের মাধ্যমে খুব কম খরচে এই প্লাস্টিক চারকোল ব্যবহার করে দূষিত পানি পরিশোধন করা সম্ভব। পরীক্ষাগারে আমরা ৯৯% পর্যন্ত ডাই বা কৃত্রিম রঞ্জক পানি থেকে দূর করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের এই সফলতা একদিকে প্লাস্টিক দূষণ যেমন কমাবে পাশাপাশি কম খরচে শিল্পকারখানার পানিদূষণ কমাতেও সহযোগিতা করবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা আরেকটি পরীক্ষা চালিয়েছি যেখানে আমরা শিল্পকারখানার দূষিত পানি থেকে চারটি ভারিধাতু (জিংক, ক্যাডমিয়াম, কপার, লেড বা সীসা ) দূর করতে সক্ষম হয়েছি। উক্ত গবেষণা পত্রটি নিরীক্ষার জন্য অপেক্ষমান রয়েছে, আমরা আশাবাদী অতি শীঘ্রই গবেষণা পত্রটি প্রকাশিত হবে।

গবেষণাদলের বাকি সদস্যরা হলেন, পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের (ইএসটি) সহকারী অধ্যাপক  সামিনা জামান, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক  নাজমুল হোসাইন, মনিসঙ্কর রায়, ইএসটি বিভাগের শিক্ষার্থী কেয়া অধিকারী, আহসান হাবীব, মোঃ শাহানুর ইসলাম, হিমেল বসু, মো. সজীবুর রহমান, মোঃ সাইমুন নাইস, খন্দকার রাশেদুল ইসলাম, বায়তুন নাহার, খাদিজা-তুল কোবরা।

এআরএস