নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে

‘নিজের মুখশ্রীর মতো দেশ মাতৃকার মুখশ্রীকে যত্নে রেখ‍‍`

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২৩, ০৪:৫০ পিএম
‘নিজের মুখশ্রীর মতো দেশ মাতৃকার মুখশ্রীকে যত্নে রেখ‍‍`

নবীন শিক্ষার্থীদের গভীর দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। 

তিনি বলেন, ‘নিজের মুখশ্রীকে যেন উজ্জ্বল দেখায়, সুন্দর দেখায় তার জন্য চেষ্টার কোনো ত্রুটি থাকে না। সেভাবেই দেশমাতৃকার মুখশ্রীকেও যত্নে রাখতে হবে। কারণ এই দেশ আমাদের মা। এর কাছে আমাদের অনেক ঋণ।’  

আজ বুধবার মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজের নবীনবরণ অনুষ্ঠান-২০২৩ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য ড. মশিউর রহমান।

দেশের প্রথিতযশা সমাজবিজ্ঞানী ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘আমি স্টেজ থেকে তাকিয়ে দেখছিলাম। ছাত্রীরা কেউ ছবি তুলছে, কেউ সেলফি তুলছে। নবীন বন্ধুদের মধ্যে চেষ্টা ছিল যেন নিজের ছবিটা অত্যন্ত সুন্দর হয়। 

নিজের মুখশ্রী যেন সবচেয়ে উজ্জ্বলতম হয়; সেটির প্রতি তার গভীর মনোযোগ ছিল। সেটি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। আমরা সবাই নিজেকে সুন্দরতম উপায়ে উপস্থাপন করতে চাই। একইভাবে আমি ভাবছিলাম, এই প্রিয় স্বদেশের অবয়ব অনন্য সুন্দরে ভরে ওঠা দরকার।

বাংলাদেশের মুখশ্রী এমনভাবে সুন্দর হয়ে ওঠা উচিত, যেমন করে তুমি তোমার মুখশ্রীকে সবচেয়ে সুন্দরতম করতে চাও, যত্ন নেও। যদি বাংলাদেশের মুখশ্রী সুন্দর করতে হয়, যদি একটি সেলফিতে বাংলাদেশের মুখশ্রী তুলে ধরতে হয় তাহলে আমাদের কী করতে হবে? আজকের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে তোমাদেরকে বলে যেতে চাই কোন কাজ করলে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল হবে। যার মধ্য দিয়ে তুমি উপস্থাপন করবে বাংলাদেশকে।‍‍`

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, ‍‍`তোমাদের মধ্যে সুন্দরতম হওয়ার যে প্রচেষ্টাটি আছে, তোমরা সেটিকে অবারিত করো। সেটির মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ সুন্দর হবে। 

তোমার মধ্যে স্মার্টনেস আছে। তোমার মধ্যে উপস্থাপনের শক্তি আছে। তোমার হাতে যে মোবাইল আছে এর মানে প্রযুক্তির সঙ্গে তোমার সখ্যতা হচ্ছে। তবে তুমি জানো তোমার মধ্যে কী কী দুর্বলতা আছে। প্রিয় শিক্ষার্থীরা তোমার কাছে অনুরোধ সেই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে তোমাকেই।‍‍`

উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‍‍`একেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে সবচেয়ে পবিত্রতম জায়গা। যখন তুমি এখানে আসবে যা যা তুমি পারো না, যা যা তোমার ব্যর্থতা সবগুলোর তালিকা করে আগামী কয়েকবছরে সব ব্যর্থতাকে দূর করে দেও। নিয়মিত লাইব্রেরিতে যাও, বইয়ের কাছে যাও। শিক্ষকের কাছে যাও। জ্ঞানের কাছে যাও, বিজ্ঞানের কাছে, উৎকর্ষতার কাছে যায়।

এই যে রাষ্ট্র যেটি তৈরি হয়েছে- অন্যকোনো দেশকে তোমার আর্দশ ভাবার প্রয়োজন নেই। তোমার জন্য বাংলাদেশ শ্রেষ্ঠ আদর্শ। কেননা আমাদের ১৯৭২ সালের সংবিধানে যে চারটি মূলনীতি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে সেটিই অনন্য। সেগুলো অনুসরণ করলেই আমরা মূলধারা তৈরি করতে পারবো। আমরা যা কিছু ভালো, শ্রেষ্ঠ সেগুলো অনুসরণ করবো।‍‍`

উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‍‍`মনে রেখ কেবল পাশ্চাত্য থেকে কেনো কিছু আসলেই সেটি শ্রেষ্ঠ হয়ে যায় না। যে মূল্যবোধ আমেরিকা বা ইউরোপ থেকে আসে সেটি শ্রেষ্ঠ তা ভাবার প্রয়োজন নেই। আমি মনে করি এই অঞ্চলের হাজার বছরের যে কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সেটিই সেরা।

কারণ আমরা যদি সাম্প্রতিককালের উদাহরণ দেই- পৃথিবী যখন যুদ্ধে লিপ্ত তখন আমরা লাখো শরণার্থীকে আশ্রয় দেই। এই মূল্যবোধ পাশ্চাত্য থেকে আসেনি। এটি জাতির জনকের কাছ থেকে আমরা শিখেছি।  তার মূলনীতিতে মানবিকতা ছিল। তুমি পৃথিবীর যেখানেই যাবে সেখানেই গর্বিত হবে। প্রযুক্তির বন্ধনে তুমি পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় পাবে। নিজেকে এমনভাবে তৈরি করবে, যেন অন্য দেশ আমাদের আদর্শ মনে করে। ’

মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর  মো. আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এ টি এম মোয়াজ্জেম হোসেন, কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো ফসিউল্লাহ প্রমুখ।

এইচআর