বাঙালির লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্য যাত্রাপালা।একসময় বিনোদনের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিলো যাত্রাপালা। গ্রামে-গঞ্জে খোলা আসরে গভীর রাত পর্যন্ত বসতো যাত্রার আসর। যাত্রাপাগল মানুষ তখন ছুটে যেতেন এবং গভীর রাত পর্যন্ত যাত্রা উপভোগ করে ভোরের আলো ফুটলে বাড়ি ফিরতেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে যাত্রাপালা। গ্রামে-গঞ্জে যাত্রাপালা হওয়ার ঘটনা এখন দৃষ্টিগোচর হয় না।কালের বিবর্তনে আধুনিক যুগের প্রযুক্তি নির্ভর জীবন-যাপনই হয়তো যাত্রাপালা হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
নজরুল বালক বয়সে ছিলেন লেটো দলের সর্দার।নজরুল মূলত নাটক রচনার মাধ্যমে সাহিত্য রচনায় প্রবেশ করে, পরবর্তীতে তার সৃষ্ট সাহিত্য-সংস্কৃতি বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবির ১২৪তম জন্মজয়ন্তীতে বাংলার লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্য যাত্রাপালাকে টিকিয়ে রাখার প্রয়াসে শিক্ষকদের অভিনয়ে মঞ্চস্থ হয়েছে কবি কাজী নজরুল ইসলামের “বিদ্যাপতি” নাটক অবলম্বনে নির্মিত যাত্রাপালা ‘অনুরাধা’।
গত বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাহি সাম্যের গান মঞ্চে নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হীরক মুশফিকের সম্পাদনা ও নির্দেশনায় শিক্ষকদের অভিনয়ে মঞ্চায়িত হয় যাত্রাপালাটি।
যাত্রাপালাটির কেন্দ্রীয় চরিত্রের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সঙ্গীত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তন্বী সাহা। যাত্রাপালাটির অপর কেন্দ্রীয় চরিত্র, বিদ্যাপতি ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং অভিনেতা মনোজ কুমার প্রামাণিক।
যাত্রাপালাটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ জন শিক্ষক সহ বিভিন্ন বিভাগের ২৫ জন শিক্ষার্থী অভিনয়ে যুক্ত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের তত্ত্বাবধানে শিক্ষকদের মধ্যে অভিনয় করেছেন ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান, ড. সোহেল রানা, ড. জাহিদুল কবীর, ড. তুহিন অবন্ত, মাসুম হাওলাদার, রায়হানা আক্তার, কল্যানাংশু নাহা, মাহমুদুল হক, আসিফ ইকবাল আরিফ, তানিয়া তন্বী, মাশকুরা রহমান রিদম, রাগীব রহমান।
যাত্রাপালাটির নির্দেশক সহকারী অধ্যাপক হীরক মুশফিক বলেন, নজরুলের নাটক বিদ্যাপতিতে পঞ্চদশ শতকের মৈথিলি কবি বিদ্যাপতির সাথে মিথিলা রাজ্যের রাজা শিবসিংহের বন্ধুত্ব এবং প্রধানত একটি ত্রিমাত্রিক প্রেমময় বাস্তবতা ফুটে উঠেছে। যার অন্তীমে ধৈর্য, ত্যাগ ও সৃষ্টিকর্তার সাথে সৃষ্টির প্রেমের যে মাহাত্ম্য, তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক চর্চার যে টানাপোড়েন চলছে সেরকম একটি সময়ে এই উদ্যোগ নেয়ার পেছনে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক কারণ রয়েছে। বলা যেতে পারে প্রজন্মের সাথে শেকড়ের মেলবন্ধন ঘটাবার দায়মুক্তির ক্ষেত্রে ছোট্ট একটি প্রয়াস এটি।
নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানের মধ্যে যাত্রাপালার মতো ভিন্নরকম আয়োজনে বাড়তি উচ্ছ্বাস দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। ক্লাসরুমের বাইরে শিক্ষকদের ভিন্ন রূপে দেখার সুযোগ পেয়ে আনন্দের কথাও জানান শিক্ষার্থীরা।
যাত্রাপালা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, নজরুল জন্মজয়ন্তীর আয়োজনে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে শিক্ষকদের অভিনীত যাত্রাপালা `অনুরাধা`। একেবারে বিলুপ্তপ্রায় এই শিল্পমাধ্যমকে যেভাবে নতুনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা সত্যি অসাধারণ। বৈরী আবহাওয়ার মাঝেও শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীরা যাত্রাপালা উপভোগ করেছেন। আগামীতেও এরকম আয়োজন থাকবে আশা করি।
আরএস