পবিপ্রবির অর্ধেক শিক্ষকই অধ্যাপক

পবিপ্রবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২৩, ০৮:২০ পিএম
পবিপ্রবির অর্ধেক শিক্ষকই অধ্যাপক

ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২১ ও ব্যানবেইস ২০২২ এর তথ্য মতে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রয়েছেন ২৫৩ জন। যার মধ্যে অধ্যাপকের সংখ্যা হচ্ছে ১২৫ জন, সহযোগী অধ্যাপক ৪০ জন, সহকারি অধ্যাপক ৮৬ জন ও প্রভাষক ২ জন। অধ্যাপকের সংখ্যার বিচারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে পবিপ্রবির অবস্থান  চতুর্থ এবং অধ্যাপক শতকরা ৪৯.৪০ শতাংশ ।

প্রতিবেশী দেশ ভারতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে অধ্যাপক মাত্র ৯ দশমিক ৪ শতাংশ। যুক্তরাজ্যে এ হার মাত্র ১০ শতাংশ, তাদের বেশির ভাগই আবার চুক্তিভিত্তিক। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে অধ্যাপক ৩০ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এদিক থেকে শীর্ষস্থানে আছে। যথাক্রমে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (৫৬ দশমিক ৬১ শতাংশ) ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (৫৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ)। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মোট শিক্ষকের সংখ্যা ১৫ হাজার ২৩৬। অধ্যাপক আছেন ৪ হাজার ৬৯১ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষকের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই অধ্যাপক হওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ ছাড়া অন্যান্য দেশে তেমন একটা দেখা যায় না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা ।

তাদের ভাষ্যমতে, গোটা বিশ্বেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক বা সমতুল্য কোন পদে যোগদানের পর প্রতিটি পদোন্নতির জন্য শিক্ষকদের উল্লেখযোগ্য গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হয়। নির্দিষ্ট সংখ্যক আন্তর্জাতিক প্রকাশনা বা জার্নালে গবেষণা ভিত্তিক মানসম্মত নিবন্ধন প্রকাশ করতে হয় যার গ্রহণযোগ্য রিসিভ বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি দীর্ঘসময়ে একাডেমিক কার্যক্রমে মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরই একটি পদোন্নতি পাওয়ার সুযোগ পান তারা। আবার কোন কোন দেশে পিএইচডি ছাড়া অধ্যাপক হওয়ার কোন সুযোগ থাকে না । যদিও বাংলাদেশ এদিকে পুরোই উল্টোদিকে চলছে । নির্দিষ্ট সময় পরেই তারা পেয়ে যাচ্ছেন পদোন্নতি। এই ক্ষেত্রে জ্ঞান চর্চা বা গবেষণার মানের পরিবর্তে রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য বেশি পায় । বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জ্ঞানচর্চার পিছিয়ে পড়ার কারণে বিষয়টি বড়ই ভূমিকা রাখছে ।

প্রতি বছরই অনুষদভুক্ত বিভিন্ন বিভাগের অনেক শিক্ষকই গবেষণার জন্য গবেষণা প্রস্তাব জমা দেন। কিন্তু গবেষণার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ অধিকাংশ শিক্ষককেই দেওয়া সম্ভব হয় না।

বাংলাদেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নিজেদের যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। কিন্তু বেতন কম থাকায় শুরু থেকেই ছুটতে হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন চাকরি কিংবা কনসালটেন্সিতে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকে তাকালে দেখা যায়, সে দেশের আইআইটি’র একজন পূর্ণকালীন অধ্যাপকের মাসিক মূল বেতন বাড়ি ভাড়া বাদেই বাংলাদেশি টাকায় ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকার কাছাকাছি। সেখানে বাংলাদেশে ২০১৫ সালের অষ্টম পে-স্কেল অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকেলশন গ্রেডের একজন অধ্যাপক (মোট অধ্যাপকের ২৫ শতাংশ) মূল বেতন পান ৭৮ হাজার টাকা যা ভারতের আইআইটি’র একজন অধ্যাপকের প্রাপ্ত মূল বেতনের মাত্র ২১ শতাংশের সমান। এ কারণে টাকা আয়ের পথ খুঁজতে গিয়ে অনেক শিক্ষকই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও গবেষণায় ঠিকমতো সময় দিতে পারছেন না।

বাংলাদেশ সরকার যদি শিক্ষা খাতে মনোননিবেশ না করে তাহলেই কখনোই বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষ কোনো অবদান রাখতে পারবেন না। 

এআরএস