আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি বলেন, ‘গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের অনেক সবক আমরা বিভিন্ন জায়গায় থেকে শুনি। এই দেশের মানুষ মানবাধিকার আর গণতন্ত্রের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। যারা আমাদের সবক দিতে আসেন তাদের কারোই অতো ত্যাগের ইতিহাস নেই। যারা আমাদের মানবাধিকারের কথা বলে তাদের কণ্ঠ ১৯৭১ সালে কোথায় ছিল। ৭৫ এ তারা সরাসরি যুক্ত ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে।
বুধবার (১৬ আগস্ট) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস ২০২৩ উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
দীপু মনি বলেন, ওই সময় তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের পক্ষে ছিল। সেদিন যারা নিহত হয়েছেন তাদের মানবাধিতার ছিল না? বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না? ২০০৪ এর ২১ আগস্টে ১৯৭৫ এর অসমাপ্ত কাজ করার জন্য সেই ঘাতকরা শেখ হাসিনাকে শুধু হত্যা করা নয়, সমগ্র আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা করেছিল। সেদিন আইভি রহমানসহ ২২ জন নিহত হয়েছিল। তাদের মানবাধিকার ছিল না। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে মাসের পর মাস এই বাংলাদেশে হত্যা ধর্ষণের যে ভয়াবহতা আমরা দেখেছি, তাদের কোনো মানাবধিকার ছিল না। মানবাধিকার শুধু আছে সেই সব ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধ যারা করেছে তাদের। কারণ তাদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য সেই সব দেশের কর্তা ব্যক্তিরা বঙ্গবন্ধু কন্যাকে বারংবার ফোন করেছেন, চাপ প্রয়োগ করেছেন।
রাজনৈতিক শিষ্টাচারের কথা উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘রাজনীতিতে শিষ্টাচার এর প্রয়োজন রয়েছে। যে রাজনীতি আমাদের দেশপ্রেম শিক্ষা দেয়। সব ক্ষেত্রেই শিষ্টাচারের প্রয়োজন। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত রাজনীতির শিষ্টাচার বোঝে না। তারা অনন্তপক্ষে ২১ বার আমাদের জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। ৭৬ কেজি বোমা, ৪৮ কেজি বোমা, গ্রেনেড হামলা, সরাসরি গুলি কিছুই বাদ দেয়া হয়নি। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোনটা রাজনীতি আর কোনটা অপরাজনীতি। এসব থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনে পথ চলতে হবে।’
নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পাঠ্যসূচিতে সত্য ইতিহাস তুলে ধরবো। অতীতে যে ইতিহাস বিকৃতির মহোৎসব চলেছে তা থেকে আমরা বের হয়ে এসেছি। তরুণ প্রজন্মকে সত্য ইতিহাস জেনে সামনে এগোতে হবে। নতুন পথ রচনা করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে আলোচকের বক্তব্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র চর্চার প্রধান অন্তরায় বিএনপি ও জামায়াত। ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিচার না করার জন্য ইনডেমনিটি আইন জারি এবং সংবিধান পরিবর্তন করা। আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বেগম খালেদা জিয়া কর্তৃক ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার গঠন করে যুদ্ধাপরাধী নিজামী-মুজাহিদকে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য করা হয়। এসব কিছুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিকে পরস্পর বিরোধী দুটো আদর্শিক ধারায় বিভক্ত করা হয়েছে। এটাই হলো বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকটের মূল কারণ।’
আলোচনা সভার শুরুতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে ঘাতকের নির্মম বুলেটে নিহত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যবৃন্দের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
এআরএস