‘চিরকুট’ লিখে ঢাবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার রহস্য উদঘাটন

নিজস্ব প্রতিবেদক ও ঢাবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩, ০৯:১৬ পিএম
‘চিরকুট’ লিখে ঢাবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার রহস্য উদঘাটন
  • মাকে অপমানে ছেলের আত্মহত্যা
  • সম্পর্ক ছিন্ন করতে চেয়েছিলেন বান্ধবী

‘মানুষ বাঁচে তার সম্মানে। আজ মানুষের সামনে আমার যেহেতু সম্মান নাই। এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আমার কোনো অধিকার নাই। আমার মৃত্যুর দায়ভার একান্ত আমার। সরি মা। বাড়ি থেকে তোমাকে দিয়ে আসার কথা রাখতে পারলাম না। আমার জীবন নিয়ে হতাশ’এই চিরকুট লিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাজী ফিরোজ আত্মহত্যা করে। 

গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া একটায় ঢাবির বিজয় একাত্তর হলের যমুনা ব্লকের ৬ষ্ঠ তলা থেকে লাফ দিয়ে এ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে বলে জানা যায়। তিনি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ২০৩ নম্বর রুমে থাকতেন। ওই শিক্ষার্থী চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়।

ঘটনার পর অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে রাখা হয়। পরে রাত দেড়টার দিকে হাসপাতাল কতৃপক্ষ তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাজী ফিরোজের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের বঙ্গমাতা হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই প্রেমের সম্পর্ক ছিলো।

সাম্প্রতিক সময়ে তাদের সম্পর্কে অবনতি ঘটে। এরপর ছেলের বান্ধবী বুঝাতে গত শুক্রবার গোপালগঞ্জ থেকে তার মা, ছোট ভাই এবং আর এক চাচাতো ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। কিন্তু ওই মেয়ে কারও ফোন রিসিভ করেননি। কেউ ফোন দিয়ে ফিরোজের পরিচয় দিলেই তাকে ব্লক করে দিতেন। এরপর ফিরোজের মা অনেকটা হতাশ হয়ে গ্রামে ফিরে যান। গ্রামে ফিরে গিয়ে ফিরোজের মা অন্য নম্বর দিয়ে পুনরায় ফোন দেন। ফোন ধরে ফিরোজের মায়ের পরিচয় পেয়ে ওই শিক্ষার্থী পুনরায় ফোন কেটে দিয়ে ওই নম্বরও ব্লক কের দেন। এতে ফিরোজ মনে করেন তার মাকে অপমান করা হয়েছে। এর জেরেই ফিরোজ আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন তার সহপাঠীরা।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক ফিরোজের এক সহপাঠী আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের সাজেক ট্যুরে যাওয়ার প্ল্যান ছিলো। সাথে ওই মেয়েরও যাওয়ার কথা ছিলো। তখন আমরা ওদের বলি যে, তোমাদের সম্পর্কতো বৈধ নয়। তাহলে তোমাদের নিয়ে যাওয়া যাবে না। এরপর ওরা বিয়ে করে- গত কয়েকদিন আগে ফিরোজ আমাকে একটা কোর্টম্যারেজের পেপার দেখায়। এরপর আমি বলি এবার তোমাদের নিয়ে যাওয়া যাবে। এরই মধ্যে ওদের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। মেয়ে একটা পারিবারিক কারণ দেখিয়ে সাময়িক সময়ের জন্য সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায়। কিন্তু ফিরোজ বলে তোমার ভালো খারাপ সব সময়েই আমি থাকতে চাই। কিন্তু মেয়ে চেয়েছিল সাময়িক সময়ের জন্য সম্পর্ক ছিন্ন। এতে ফিরোজ অনেক বেশি হতাশ হয়ে পড়ছিল। 

ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিষয়টি ফিরোজের পরিবারও জানত। তাই ছেলের বান্ধবীকে বুঝাতে ফিরোজের মা ঢাকায় আসেন। আমিও ওই মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছি, বুঝানোর ট্রাই করেছি কিন্তু তাতে কোন লাভ হয় নাই।’ 

ফিরোজের এই সহপাঠী আরও বলেন, গত মঙ্গলবারও আমরা একসাথে ক্লাস করেছি। রাতে আড্ডা দিয়েছি। ও আমার কাছ থেকে পরেরদিনের পড়ার নোট নিয়েছে। এরপর আত্মহত্যা করল। আমরা কেউই বুঝতে পারি নাই যে ও এই কাজ করবে।

অপর এক সহপাঠী বলেন, ‘ওই মেয়ে চেয়েছিল তার কোন বিষয়ে যেন ফিরোজ কোন ধরনের হস্তক্ষেপ না করে। মেয়ে ফিরোজ কিংবা ওর পরিবারের কারও সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ রাখতে চাচ্ছিল না। এরই মধ্যে ফিরোজের মা ঢাকায় আসলে মেয়ে আরও ক্ষেপে যায়।ফিরোজকেও ব্লক করে দেয়। এতে হতাশ হয়ে পড়ে ফিরোজ। এর জেরেই ও আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা সহপাঠীদের।

আরএস