উপাচার্যের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চাইলেন জাবি ছাত্রলীগ নেতা

জাবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৩, ০৮:০০ পিএম
উপাচার্যের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চাইলেন জাবি ছাত্রলীগ নেতা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চাইলেন শাখা ছাত্রলীগ নেতা জাহিদ হাসান ইমন। সাবেক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগপত্র ও নিরাপত্তা চেয়ে শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে উপাচার্য ও তার একান্ত সচিবকে মেইলের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছেন তিনি। ইমন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (২০১৬—১৭) সেশনের শিক্ষার্থী ও শেখ রাসেল হলের আবাসিক ছাত্র।

ইমন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান করা আমার জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ছাত্র জীবন শেষ করতে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে উপাচার্যকে মেইল করেছি। একইসাথে আমার ওপর নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি চেয়েছি।’

‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে জীবনের নিরাপত্তা ও নিপীড়নের ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের শাস্তি চেয়ে আবেদন’ শীর্ষক অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের ছোট ভাই আরমান খান যুব ইয়াবা সেবন করা অবস্থায় মারধর করেছেন। সেইসাথে আমার শরীরে মদ ঢেলে মাদকাসক্ত প্রমাণের চেষ্টা করে।’

অত্যাচারের বর্ণনা দিয়ে ইমন অভিযোগপত্রে বলেন, ‘৪ জন মিলে রড, হাতুড়ি, হাত দিয়ে অনবরত অত্যাচার চালিয়েছে। এবার কাপড়ের ভেতর থেকে বের করা হলো পিস্তল। পেটে ঠেকানো হল। ভয় কাঁপছিলাম, কারণ ইয়াবা সেবন মাত্রই করেই জুবো ভাই পিস্তলটা বের করলেন ও ধরলেন। ভয় হলো মেরে দিতেও পারে। চোখ অফ করলাম, গড়গড় করে পানি বেরিয়ে এলো চোখ থেকে, বাবা মায়ের কথা ভাবলাম। ভাইকে বললাম ভাই আর পারছি না, পেটে গুলি করলে নাও মরতে পারি, মাথায় গুলি করেন। গুলি না করে পেটেই চাপ দিলেন নল দিয়ে। এদিক মার থেমে নেই। মাথায় হাতুড়ি, রড দিয়ে শরীরে মার হচ্ছেই।’

ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম ও উপাচার্যের সচিব গৌতম কুমার বিশ্বাসকে ই-মেইলে এ অভিযোগপত্র প্রেরণ করেন। উপাচার্য বরাবর অভিযোগপত্রে ইমন দাবি করেন, ‘বাংলা বিভাগের ৪১ ব্যাচের সাবেক ছাত্র আরমান খান যুব ও তার সহযোগীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের ১২৬ নম্বর কক্ষে নির্যাতন চালিয়েছেন। যেখানে নিার্তন শেষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল উপস্থিত হয়। একইসঙ্গে তার শরীরে পিস্তল ঠেকিয়ে ঘটনা প্রকাশ না করার হুমকি দেন যুব।’

অভিযুক্তদের মধ্যে আরমান খান যুব ছাড়াও আাছেন ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের মো. আরাফাত, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের তুষণ ও অজ্ঞাত আরেক ব্যক্তি। কয়েক বছর আগে ছাত্রত্ব শেষ হওয়া অভিযুক্তরা মওলানা ভাসানী হলের ১২৬ নম্বর কক্ষ এখনো দখলে রেখেছে। বিষয়টি স্বীকার করে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক হুসাইন মো. সায়েম বলেন, ‘হলের ১২৬ নম্বর কক্ষে সাবেক শিক্ষার্থীরা থাকে, সে বিষয়টি জানি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। তবে মারধরের ঘটনা আমি জানিনা।’

ইমন অভিযোগপত্রে ঘটনা পরবর্তী সময়ের বর্ণনা দিয়ে উল্লেখ করেন, ‘পরেরদিনে গোসল করে ফ্রেশ হলাম। গেলাম প্রক্টর এর কাছে। উনি বাসায় ডাকলেন। বাসায় গিয়ে দেখি সোহেল ভাই একান্তে বসে আছে। প্রক্টর আমাকে নিভৃতে কথা বলার সুযোগ দেয়নি। সোহেল ভাইয়ের সামনে তিনি আমার সাথে কথা অব্যাহত রাখেন। তিনি জানতে চান, ‘জুবোর রুমে গেছিলা’। কোন প্রবলেম? বললাম, না। বাইরে অপেক্ষা করলাম। সোহেল ভাই বের হলে দাঁর্ড় করিয়ে মারের দাগ গুলো দেখিয়ে কাদলাম। বললাম আপনাকে কখনো বকিনি আমি।’

বিচার চাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারপর চলে গেলাম এস আই এর কাছে। এস আই মামলা ও অভিযোগ দিতে বলল। বললাম আমি ছাত্রলীগ, লাভ হবেনা। আমি আস্থা পাচ্ছিলাম না। বাসায় এলাম, ভাবছি কি করব। যেখানে ক্যাম্পাসে অভিভাবক ভাবি যাদের, তাদের কোন ভ্রম্নক্ষেপ নাই, কেউ পাশে থাকবেনা। আমি যেদিন মার খাই, হ্যালোসুনিশেনে পড়ে যাই।’

যুবোর বড়ভাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের বিষয়ে ইমন জানান, ‘হঠাৎ মনে হয় আল নাহিয়ান খান জয় ভাইকে জানাতে পারি কারণ তিনি আমার পূর্ব পরিচিত। কাটাবন টপটেন এ জয় ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত করি। সাতদিন সময় নেন ভাই। উনি সমাধান দেবেন। সাতদিন আমাকে দূরে থাকতে বলেন। তিনি নিজেও লজ্জিত হয়েছেন জানান। আমি তার কাছে স্বাভাবিক জীবন ও নিরাপদ জীবন যাপন অনুরোধ করি। সাতদিন পর ফোন দিলেও আর ফোন ধরেন নাই। পরবর্তীতে মন খারাপ, হতাশা মানুষকে শেয়ার করতাম। সুইসাইড এটেম্প নিছি কয়েকবার।’

প্রক্টরের প্রতি আস্থাহীনতার কথা উল্লেখ করে অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘১৩ই আগস্টের ঘটনায় এতোদিন পর আপনার কাছে আবেদন করছি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে জানানোর পরেও তিনি আমাকে লিখিত অভিযোগ জমা দিতে বলেনি। উপরন্তু বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে সমাধানের জন্য তিনি পরামর্শ দেন। একইসাথে ঘটনার পরেরদিন প্রক্টর স্যারের বাসায় ছাত্রলীগ সভাপতির একান্তে বৈঠক, আমার কাছে প্রশাসনকে আস্থাহীন করে তোলে। প্রক্টরের ওপর আস্থা রাখতে না পারায় আপনার নিকট আবেদন জানাচ্ছি।’
ইমনের এই অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘মারধরের বিষয়টি ইমন আমাকে অবগত করেছিল। কিন্তু লিখিত অভিযোগ দেয়নি। সে নিজেই বলেছে, বিষয়টি সে রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে চায়। সে আমাকে বলেছিল, এ বিষয়ে সে নিজে থেকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবে।’

অভিযোগপত্রের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সচিব গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেছেন, ‘অফিস বন্ধ থাকায় কী ই—মেইল এসেছে তা জানেন না।’ তবে অভিযোগপত্রের একটি কপি এই প্রতিবেদকের নিকট সংরক্ষিত আছে।

এআরএস