শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) পরীক্ষায় বসছেন তিন বিভাগের ১৮ জেলার ৩ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি প্রার্থী। এদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার লিখিত (এমসিকিউ) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে এবারই প্রথম আবেদন ও পরীক্ষা বিভাগ ধরে তিনভাগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের প্রার্থীদের পরীক্ষা। বিভাগ তিনটির ১৮ জেলার ৫৩৫টি কেন্দ্রে একযোগে পরীক্ষা নেওয়া হবে। কেন্দ্রগুলোতে কক্ষের সংখ্যা থাকবে মোট ৮ হাজার ১৮৬টি।
জেলাগুলো হলো— রংপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার।
প্রতি পদের বিপরীতে লড়বেন ১৩০ প্রার্থী
প্রথম ধাপে পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৬০ হাজার ৬৯৭ জন চাকরিপ্রার্থী। এ ধাপে বরিশাল, রংপুর ও সিলেট বিভাগের ৭২ উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী- তিন বিভাগের সরকারি প্রাথমিকে শূন্য পদ রয়েছে ২ হাজার ৭৭২টি। সেই হিসাবে প্রতি পদের বিপরীতে লড়বেন ১৩০ জন। তবে, কোটা সুবিধার কারণে নারী প্রার্থীরা নিয়োগের ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবেন।
তত্ত্বাবধানে ৩ অতিরিক্ত সচিব, সব কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেট
লিখিত পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে তিন বিভাগে পরীক্ষা কার্যক্রমের সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকবেন তিনজন অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা। রংপুর বিভাগের অধীন সব জেলার পরীক্ষা কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করবেন বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষন ইউনিটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মিজানুল হক চৌধুরী।
সিলেট বিভাগের তত্ত্বাবধান থাকবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোছা. নূরজাহান খাতুন এবং বরিশাল বিভাগের দায়িত্বে থাকবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাসুদ আকতার খান।
এদিকে, নিয়োগ পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে তিন বিভাগের প্রতিটি কেন্দ্রে, অর্থাৎ ৫৩৫টি কেন্দ্রেই ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। পরীক্ষা সংক্রান্ত জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্টদের ০২৫৫০৭৪৯৬৯ নম্বরে যোগাযোগের অনুরোধ জানিয়েছে অধিদপ্তর।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষা সংক্রান্ত সব সামগ্রী এরই মধ্যে জেলায় জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
এক ঘণ্টা আগে প্রার্থীকে কেন্দ্রে যেতে হবে
সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা হবে কেন্দ্রের সব প্রবেশপথ তালাবদ্ধ করে। পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে প্রার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্র অবশ্যই সঙ্গে আনতে হবে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে সতর্কীকরণ ঘণ্টা বাজিয়ে কেন্দ্রের সব প্রবেশপথ বন্ধ করে তালাবদ্ধ করা হবে। এরপর কোনো প্রার্থীকে প্রবেশ বা বের হতে দেওয়া হবে না। দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া আর কাউকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে বা বের হতেও দেওয়া হবে না।
পরীক্ষাকেন্দ্রে মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
পরীক্ষা কেন্দ্রে কোনো বই, উত্তরপত্র, নোট বা অন্য কোনো কাগজপত্র, ক্যালকুলেটর, মোবাইল ফোন, ভ্যানিটি ব্যাগ, পার্স, হাতঘড়ি বা ঘড়িজাতীয় বস্তু, ইলেকট্রনিক হাতঘড়ি বা যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কমিউনিকেটিভ ডিভাইস বা এ জাতীয় বস্তু সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করা বা সঙ্গে রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কোনো পরীক্ষার্থী এসব দ্রব্য সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করলে তাৎক্ষণিক তাকে বহিষ্কারসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরীক্ষার কক্ষে নিজ আসনে কান খোলা রেখে বসতে হবে প্রার্থীদের। কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে প্রার্থীরা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। তা নিশ্চিত করতে পরীক্ষাকেন্দ্রের ফটকে প্রার্থীদের দেহ তল্লাশি করা হবে। নারী প্রার্থীদের নারী পুলিশ ও পুরুষ প্রার্থীদের পুরুষ পুলিশ সদস্যরা তল্লাশি করবেন। প্রার্থীর কাছে কোনো ডিভাইস আছে কি না, তা মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে শনাক্ত করা হবে।
লটারির মাধ্যমে পরিদর্শক নির্ধারণ
প্রত্যেক কেন্দ্রে প্রতি ২৫ জন প্রার্থীর বিপরীতে একজন করে কক্ষ পরিদর্শক নিয়োগ করবে জেলা কমিটি। সরকারি কলেজ, পিটিআই, সরকারি মাধ্যমিক স্কুল, সরকারি কারিগরি কলেজ বা মাদরাসা, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পাবেন।
কোন পরিদর্শক কোন কক্ষে দায়িত্ব পালন করবেন, তা নির্ধারণ করা হবে পরীক্ষা শুরুর পৌনে এক ঘণ্টা আগে। সেটাও ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে লটারির মাধ্যমে ঠিক করা হবে। কারও কোনো নিকটাত্মীয় পরীক্ষার্থী থাকলে তাকে কেন্দ্র সচিব বা পরিদর্শকের দায়িত্ব দেওয়া হবে না।
ওএমআর সিট-প্রশ্নপত্র যেভাবে পৌঁছাবে
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পুলিশ পাহারায় ওএমআর সিট, গোপনীয় ডকুমেন্টস্ সিলগালা করা ট্রাঙ্কে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে পাঠানো হবে। ট্রেজারিতে তা নিরাপদ হেফাজতে সংরক্ষণ করা হবে। পরীক্ষাকেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ের আগে কোনো অবস্থাতেই ট্রাঙ্ক খোলা যাবে না। প্রশ্নপত্র ও গোপনীয় কাগজপত্র সিলগালা করা ট্রাঙ্কে পুলিশ ফোর্সসহ একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রে পাঠানো হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে।
পরীক্ষা শুরুর ২০ মিনিট আগে প্রার্থীদের ওএমআর সিট সরবরাহ করা হবে। হাজিরা সিটে পরীক্ষার্থীর ছবি, তথ্য ও স্বাক্ষর মিলিয়ে তার উপস্থিতি নিশ্চিত হতে হবে। পরীক্ষা শুরুর ৫ মিনিট আগে প্রশ্নের প্যাকেট পৌঁছাবে কক্ষ পরিদর্শকের হাতে। পরীক্ষার্থীকে উত্তরপত্রে অবশ্যই কালো বলপয়েন্ট কলম ব্যবহার করতে হবে। পরীক্ষা শেষে উত্তরপত্র ও প্রশ্নপত্র চূড়ান্তভাবে হস্তান্তর না করে কোনো প্রার্থী কেন্দ্র থেকে বের হতে পারবেন না।
‘টাকার বিনিময়ে শিক্ষক হওয়ার সুযোগ নেই’
টাকার বিনিময়ে বা অনৈতিক কোনো উপায়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। কেউ অর্থের বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখালে তাকে থানায় সোপর্দ অথবা পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থাকে জানাতে অনুরোধ করেছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সই করা সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিয়োগ বিধি অনুসরণ করে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে। প্রার্থীদের রোল নম্বর, আসনবিন্যাস, প্রশ্নপত্র ছাপা ও কেন্দ্রে পাঠানো, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফল প্রস্তুতসহ সব কাজ সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা হবে। পরীক্ষাকেন্দ্রেও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। জোরদার করা হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতাও। কোনো ধরনের অবৈধ হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।
এতে আরও বলা হয়, দালাল বা প্রতারক চক্রের প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়ে অর্থ লেনদেন না করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হলো। অর্থ লেনদেন বা অনৈতিক উপায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ নেই। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই চাকরি হবে।
আরএস